নারী-পুরুষে সমতা অর্জন বা লিঙ্গবৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবস্থান আরও সংহত করেছে। সমতা অর্জনের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম। লিঙ্গবৈষম্য দূর করার প্রতিযোগিতায় ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে অনেক পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের লিঙ্গবৈষম্যবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৭’-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নারীর জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি ও অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছে। ১৪টি সূচকের মধ্যে ৪টিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১ নম্বরে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ১৪৪টি দেশের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তালিকার শীর্ষে আছে আইসল্যান্ড। তারপরে আছে নরওয়ে। আর নারী-পুরুষে বৈষম্য সবচেয়ে বেশি ইয়েমেনে। ইয়েমেনের অবস্থান ১৪৪তম। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির চেয়ে পরিস্থিতি একটু ভালো পাকিস্তানে। ১৪৩তম অবস্থানে আছে পাকিস্তান।
১৪টি সূচকের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি করার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১ নম্বরে। মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তির সূচকেও বাংলাদেশ ১ নম্বরে। গত ৫০ বছরে সরকারপ্রধানের সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান ১ নম্বরে। আর জন্মের সময় নারী-পুরুষ অনুপাতেও বাংলাদেশ ১ নম্বরে। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, মন্ত্রিত্ব পদ, শ্রমবাজার, উচ্চতর শিক্ষা—এসব সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান পেছনে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি স্বাধীন প্রতিবেদন। সরকারের কোনো পক্ষপাত এই প্রতিবেদন তৈরিতে কাজ করেনি। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে জেন্ডার পরিস্থিতির উন্নয়ন হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
প্রতিবেদন বলছে, আইন প্রণয়নকারীদের মধ্যে নারী-পুরুষের অনুপাত, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপকসহ অন্যান্য পেশাজীবীর লিঙ্গসমতা, উপার্জন ও মজুরির ক্ষেত্রে বৈষম্য হ্রাস বাংলাদেশের অবস্থান ওপরের দিকে নিয়ে গেছে। নারী ও পুরুষের গড় আয়ুর ক্ষেত্রে পার্থক্য বৃদ্ধি পাওয়ার পরও এই উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশে পুরুষের চেয়ে নারীর গড় আয়ু বেশি।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, নারী-পুরুষ সমতার বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও আফ্রিকার উপসাহারা এলাকা বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল। এসব দেশের ঠিক ওপরের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রতিটির অবস্থান ১০০-এর নিচে। মালদ্বীপের অবস্থান ১০৬। ভারত ও শ্রীলঙ্কার অবস্থান যথাক্রমে ১০৮ ও ১০৯। নেপাল ও ভুটানের অবস্থান যথাক্রমে ১১১ ও ১২৪।
২০০৬ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এই প্রতিবেদন তৈরি করছে। ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষ অবস্থান দখল করে আছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭২। এক বছরে বাংলাদেশ ২৫ ধাপ ওপরে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, অনেক দেশ লিঙ্গবৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে উন্নতি করলেও বৈশ্বিকভাবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ২০০৬ সালের পর বৈশ্বিক অবনতি এই প্রথম।