কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকায় আজ বুধবার সকালে এক নারী আইনজীবীর মুখে ঘুষি এবং বুকে ছুরি ধরে সবকিছু নিয়ে গেল তিন ছিনতাইকারী। আইনজীবীর নাম পারভিন সুলতানা। তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) পালস বাংলাদেশের লিগ্যাল অফিসার।
ছিনতাইকারীরা পেছন থেকে এসে আইনজীবী পারভিন সুলতানার গলা ও মুখ চেপে ধরে। এ সময় আরেকজন সামনে এসে হাত ধরে মাটিতে ফেলে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। আরেকজন বুকে ছুরি ধরে আইনজীবীর ব্যাগে থাকা নগদ ৪৯ হাজার টাকা, ২টি মুঠোফোন, ১টি পাওয়ার ব্যাংক, ২টি ডায়েরি, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ মূল্যবান কাগজপত্র লুট করে। আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে পাহাড়তলীর রহমানিয়া মাদ্রাসার পাশে সিকদার বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্য সড়কের ওপর একজন নারী আইনজীবী পারভিন সুলতানাকে জাপটে মাটিতে ফেলে বুকে ছুরি ধরে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটের ঘটনায় সমিতির সদস্যরা ক্ষুব্দ ও মর্মাহত। ঘটনার পর গুরুতর আহত আইনজীবী চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিকেলে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে এসে তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন।
হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম কক্সবাজারের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলার সিনিয়র আইনজীবী আবদুল শুক্কুর প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাইকারীরা তাঁকে (পারভিন সুলতানা) শারীরিকভাবে আঘাত করে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল।
পাহাড়তলীসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় ১০টির বেশি সন্ত্রাসী বাহিনী সক্রিয় থাকলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। সর্বশেষ ৩১ মে সন্ধ্যায় পাহাড়তলীর দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে দুই সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়। এদিকে এখনো নারী আইনজীবীর লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই আইনজীবী শুক্কুর।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সেলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ঘটনার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এ ব্যাপারে আইনজীবীদের কেউ থানায় লিখিত অভিযোগও করেননি। অভিযোগ পেলে পুলিশ ছিনতাইকারীদের আটক ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে চেষ্টা চালাবে।
বিকেল পাঁচটার দিকে আইনজীবী পারভিন সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তিনি পাহাড়তলীর বাসা থেকে হেঁটে শহরের প্রধান সড়কের কালুর দোকানের দিকে যাচ্ছিলেন। সেখান থেকে বাসে উঠে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড হয়ে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার কথা ছিল। ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সেবায় নিয়োজিত এনজিও পালস বাংলাদেশে তিনি চাকরি (লিগ্যাল অফিসার) করেন।
পারভিন সুলতানা বলেন, বাসা থেকে পাঁচ মিনিট হেঁটে রহমানিয়া মাদ্রাসার কাছে সিকদারবাড়ির সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে কেউ একজন এক হাতে তাঁর (আইনজীবীর) গলা চেপে ধরে, আরেক হাতে মুখ চেপে ধরে। ধস্তাধস্তি করলে আরেকজন সামনে এসে তাঁর দুই হাত ধরে ফেলে। আরেকজন এসে মুখে আঘাত করে এবং হইচই-চিৎকার না করতে বুকে ছুরি ধরে। মুহূর্তে তিনি (আইনজীবী) মাটিতে লুটে পড়েন। এ সময় বুকে ছুরি ধরে এবং মুখ-হাত ও শরীরে আঘাত করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তখন সড়কে লোকজনও ছিল না।
আইনজীবী পারভিন সুলতানা বলেন, ছিনতাইকারীদের মারধরে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তাঁর জ্ঞান ফিরে এলে তিনি শরীরে ব্যথা অনুভব করেন। এরপর খানিকটা দূরের একটি রেস্তোরাঁর মালিক আবদুর রহিম সওদাগর তাঁকে উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দেন।
হত্যার উদ্দেশ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা দাবি করে এই নারী আইনজীবী প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় এক ছিনতাইকারী বলছিল—‘শেষ করে দাও’। একজন ছুরি নিয়ে সামনে এলে পেছন থেকে আরেকজন ডাক দিয়ে বলে ওঠে—‘থাম, মারিস না’।
পরে ছিনতাইকারীরা তাঁর ব্যাগভর্তি ৪৯ হাজার টাকা, ২টি মুঠোফোন, ২টি ডায়েরি, ১টি পাওয়ার ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুট করে। থানায় মামলা প্রসঙ্গে আইনজীবী পারভিন সুলতানা বলেন, ‘চিকিৎসা শেষ করে বিকেলে আইনজীবী সমিতিতে এসেছি, সিদ্ধান্ত নিয়ে থানায় যাব মামলা করতে।’