গ্রামের মানুষের কাছে এখনো নারীর প্রতি ন্যায়বিচারের অভাব এবং যৌতুক ও বাল্যবিবাহ প্রধান সমস্যা। এর পরেই মানুষের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সুশাসন নিশ্চিত করা। এর মধ্যে রয়েছে আইনের শাসন কায়েম, দুর্নীতি দূর এবং মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা।
২০১৫ সালের পর দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হবে, তা জানতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের পক্ষ থেকে করা ওই জরিপে এসব বিষয় উঠে এসেছে। গ্রামীণ পর্যায়ে ৩০ হাজার ২৩৪ জনের কাছ থেকে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের উন্নয়নের চাহিদা জানতেই এই জরিপ করা হয়েছে।
উন্মুক্ত পদ্ধতিতে, অর্থাৎ কোনো সরাসরি প্রশ্ন না করে মানুষ নিজেরা উন্নয়নের জন্য কী চায়, এমন প্রশ্নের জবাবে মানুষ দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দারিদ্র্যের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টির কথা উল্লেখ করেছেন। সবার জন্য সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথাও বলেছেন অনেকে।
জরিপে মানুষের কাছে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা সৃষ্টি এবং বিদ্যুতের অবকাঠামো গড়ে তোলার কথা জরিপে উঠে এসেছে।
গত সোমবার ব্র্যাক মিলনায়তনে ওই জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব হোসেন। জরিপটির প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০১৫ সালের পর সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি বেশ ভালো। বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রার দুই বছর আগেই তার অর্জনে পৌঁছাবে।
মাহবুব হোসেন বলেন, এমডিজির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা, এটি ছিল ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া। এতে দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, লিঙ্গবৈষম্য দূর করা ও পরিবেশগত সুরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু টেকসই ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সুশাসনের মতো বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। উন্নয়নে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয়গুলো আমলে নেওয়া হয়নি।
হাঙ্গার প্রজেক্ট, বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশে সুশাসন ও দুর্নীতির বিষয়টি এখনো অনেক বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। কোনোভাবেই এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা বা দূর করা যাচ্ছে না।
অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, দেশের অনেক অর্জন আছে। কিন্তু অনেক সম্ভাবনা ও অর্জনের পথে দুর্নীতি ও অপশাসন বড় বাধা হিসেবে সামনে চলে আসছে। ব্র্যাকের জরিপে নারীর প্রতি অন্যায় আচরণ, যৌতুক ও বাল্যবিবাহের বিষয়টি এখনো এক নম্বর সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। তাহলে আমরা এত দিন কতটুকু আগালাম, সেই প্রশ্ন ভেবে দেখার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিক ও বক্তারা বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। ব্র্যাকের জেষ্ঠ পরিচালক আসিফ সালেহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মাহবুব হোসেন ব্র্যাকের কার্যক্রম, অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।