ঢাকায় সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির কাগজে-কলমে ১২টি বিশেষ বাস আছে নারীদের জন্য। সকালে ও বিকেলে অফিস সময়ে তা চলছে। তবে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন রুটের কর্মজীবী নারীরা বলছেন, এই বাস নামে আছে, বাস্তবে তার দেখা মেলে না। তবে বিআরটিসির চেয়ারম্যান বলেছেন বাসের যাত্রী সংখ্যা কম।
বিআরটিসির হিসাব অনুসারে এই ১২টি বাসের কিছু ৫২ আসনের এবং কিছু ৭৪ আসনের।
মিরপুর ১ নম্বর থেকে বাসে করে ধানমন্ডিতে প্রতিদিন কর্মস্থলে আসেন মাহবুবা। তিনি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করেন। মাহবুবা বলেন, ‘বছর খানেক আগে মহিলা বাসে করে কয়েক দিন কর্মস্থলে যাতায়াত করেছি। এখন রাস্তায় নেমে যখন কোনো বাসেই উঠতে পারি না, খরচের কথা চিন্তা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশাও নিতে পারি না, তখন শুধু মহিলা বাস খুঁজি। কিন্তু তার দেখা মেলে না। মহিলা বাসের সহকারী নারী, যাত্রীরাও নারী। তাই এ বাসে যাতায়াত করতে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হতো না।’
তবে বিআরটিসি বলছে, নারী যাত্রীদের পক্ষ থেকেই মহিলা বাস সার্ভিসের তেমন কোনো চাহিদা নেই। নারী যাত্রী খুঁজে খুঁজে আনতে হয়। তাই মহিলা বাস চালাতে গিয়ে তাদের শুধু লোকসান দিতে হচ্ছে।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে রাজধানীতে মহিলা বাস চলছে ১২টি। সবাই শুধু সংখ্যা দেখে। কিন্তু আমরা তো কোনো দাতব্য চিকিৎসালয় না। আমাদের আয় দিয়েই চলার কথা। একটি দোতলা বাসে নারী যাত্রী পাওয়া যায় ২০ জনেরও কম। আবদুল্লাহপুরে নতুন সার্ভিস চালু করেছি। ৫২ সিটের বাসে যাওয়ার সময় একজন নারী যাত্রী ছিলেন।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘একা চলাফেরা করা নারী যাত্রীর সংখ্যা কম। সঙ্গে বাবা, ভাই, স্বামী বা বন্ধু থাকে। কিন্তু মহিলা বাসে শুধু “মহিলা” যাত্রীকে তুলতে হবে। তা না হলে চিল্লাপাল্লা শুরু হয়। একা পুরুষ যাত্রী তোলা হবে না, নারীর সঙ্গে যারা থাকবে তারা উঠতে পারবে—জনগণের ভেতর থেকে এ ধরনের দাবি উঠলে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ত। যাই হোক, সরকারের সিদ্ধান্ত, তাই আমরা লোকসান দিয়েও দিনে দুবার করে মহিলা বাস চালাচ্ছি।’
বিআরটিসির মহিলা বাস সার্ভিস পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম চালু হয় ১৯৯৮ সালে। ২০০১ সালে তা ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় সম্প্রসারণ করা হয়। ২০০৯ সালে আবার এই সেবাকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তবে তা তেমনভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জাপান গার্ডেন সিটির কাছে একটি সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘মহিলা বাস সার্ভিস স্ট্যান্ড’। তবে গতকাল সোমবার সেখানে গিয়ে বাস তো দূরের কথা ওই সাইনবোর্ডের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়নি।