>স্বামী গ্রেপ্তার। পুলিশ বলছে, দাম্পত্য কলহের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড। স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন স্বামী।
দক্ষিণ মুগদার ব্যাংক কলোনি এলাকার একটি বাসায় হাসি বেগম (২৭) নামের এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর স্বামী কমল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্ত্রীকে হত্যার পর তিনি লাশে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। পুলিশ বলেছে, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার কমল স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সুজন নামের এক যুবকের সঙ্গে হাসির বিয়ে হয়েছিল। সুজন মাদকাসক্ত হওয়ায় দেড় বছর আগে হাসি তাঁকে তালাক দেন। ওই ঘরে মেহেদি হাসান নামে তাঁদের আট বছরের এক ছেলে আছে। সুজনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর আট মাস আগে কমল হোসেনের সঙ্গে হাসির বিয়ে হয়। তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। লেদ কারখানার মালিক কমলেরও এটি দ্বিতীয় বিয়ে। হাসিকে নিয়ে কমল মুগদা ব্যাংক কলোনির একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। পাশের কক্ষে থাকেন হাসির মা-বাবা, ভগ্নিপতিসহ ছোট বোন। কয়েক দিন আগে নাতি মেহেদিকে দেখতে হাসির বাসায় আসেন তাঁর সাবেক শাশুড়ি।
হাসির ভগ্নিপতি আসিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হাসির সাবেক স্বামী সহযোগীদের দিয়ে পথেঘাটে কমল হোসেনকে বিরক্ত করে আসছিলেন। এসব নিয়ে কমলের সঙ্গে হাসির সাবেক শাশুড়ির কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় হাসি সাবেক শাশুড়ির পক্ষ নিলে কমল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। গতকাল বুধবার ভোরে মেহেদিকে নিয়ে শরিয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে চলে যান তার দাদি। সকাল ছয়টার দিকে কমল জানান, হাসি তাঁর শরীরে আগুন দিয়েছে। এরপর তাঁরা গিয়ে দেখেন, মেঝেতে পড়ে থাকা হাসির নিথর দেহে আগুন জ্বলছে। এরপর তাঁরা পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এ সময় মুগদা থানায় খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে হাসির পোড়া লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
হাসির মা আলাপী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমার মেয়ে কমলকে বলেছিল, মেহেদির ভবিষ্যতের জন্য ১০ লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এই ঘরে সন্তান হলে তখন তো কমল মেহেদিকে দেখবে না। এ নিয়ে কমলের সঙ্গে হাসির কথা–কাটাকাটি হয়। মেহেদির ভবিষ্যতের ব্যবস্থা না করে দিলে তার জন্য (মেহেদি) হাসি বিদেশ যাবে। কিন্তু কমল এতে রাজি হয়নি। গতকাল ভোররাতে মেহেদির দাদির হাতে এক হাজার টাকা তুলে তাকে (মেহেদি) নিয়ে চলে যেতে বাধ্য করে কমল।’ তাঁর অভিযোগ, ‘আমার মেয়েটারে গলা টিপে মেরে বিছানার নিচ দিয়ে শরীরে আগুন দিছে। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।’
মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রলয় কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর কমলকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে কমল শ্বাস রোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেছেন, দাম্পত্য কলহের জের ধরে বিছানায় কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। তিনি হাসির আগের পক্ষের ছেলে মেহেদিকে মেনে নিতে পারছিলেন না।
পুলিশ জানায়, গতকাল কমল হোসেনকে (৩০) আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন হাসির বাবা শেখ আলতাফ। মামলার বিবরণে বলা হয়, বিয়ের পর থেকে হাসিকে মারধর করতেন কমল। বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসাও করা হয়েছিল। হাসিকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ গুম করতে বা ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে বিছানায় কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে হাসির দুই পা, ঊরু, চুল, কান, কোমর, পিঠ, গলা ও আঙুল পুড়ে গেছে।
গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে হাসির লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, হাসির শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়া চিহ্ন আছে। তাঁর গলা ও ঘাড় থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।