নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জসহ ৫টি নৌপথে চলাচলকারী ৭০টি সানকেন ডেক (ছোট আকারের যাত্রীবাহী লঞ্চ) লঞ্চ চলাচলের ওপর থেকে বিআইডব্লিউটিএর স্থগিতাদেশ তুলে না নিলে আদালতে মামলা করার হুমকি দিয়েছে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে সংগঠনের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অন্তত ছয় মাসের জন্য ওই লঞ্চগুলোকে চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান সংগঠনের চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন আহমদ।
গত ২০ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ রূপসী-৯ এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসারউদ্দিন ডুবে যাওয়ার ঘটনার পরদিন থেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫টি নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। এরপর ৩ এপ্রিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে বিআইডব্লিউটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও লঞ্চ মালিকের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানেও নিরাপত্তার স্বার্থে নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী সানকেন ডেকবিশিষ্ট এসব লঞ্চ চালুর অনুমতি দেওয়া সমীচীন হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।
ওই সভার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতেই আজকের সংবাদ সম্মেলন বলে জানান অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার চেয়ারম্যান।
সংবাদ সম্মেলন শেষে মাহবুব উদ্দিন আহমদকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সেদিন আমাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব উদ্দিন আহমদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি পুরোনো নদীবন্দর। ব্রিটিশ আমল থেকে এই বন্দর থেকে ছোট আকারের লঞ্চগুলো অল্প দূরত্বে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মতলব, মাছুয়ান, নারায়ণপুর, ওয়াপদা, সুরেশ্বর ও রামচন্দ্রপুর চলাচল করে আসছে। নারায়ণগঞ্জে এই পর্যন্ত যত দুর্যটনা ঘটেছে, তার সব কটিই কোনো না কোনো কার্গো জাহাজের ধাক্কায় হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কোনো লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেনি। আইনের তোয়াক্কা না করে গত ২১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন নৌপথে চলাচলরত ৭০টি লঞ্চের সময়সূচি স্থগিত করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। এতে এসব লঞ্চের সঙ্গে জীবিকা জড়িয়ে থাকা ৪২০টি পরিবার অসহায় অবস্থায় পড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন নৌপথে লঞ্চ চলাচল করার জন্য নদীতে পৃথক লেন করে দিলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যাবে বলে দাবি করেন মাহবুব উদ্দিন আহমদ। এ ছাড়া লঞ্চ চলাচল না হলে যেকোনো সময় শ্রমিক অসন্তোষও দেখা দিতে পারে—হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
মাহবুব উদ্দিন বলেন, সানকেন ডেকের পরিবর্তে হাইডেক বা ওয়েদার ডেক–বিশিষ্ট ছোট আকারের নতুন জাহাজ তৈরির পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়াতে পৃথক লেনে পরিচালনা করতে হবে। অন্যথায় সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকেই যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জের লঞ্চ মালিকরা ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান।
গত ২০ মার্চ নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন কার্গো রূপসী-৯ এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম এল আফসার উদ্দিন-২ ডুবে যায়। বেশির ভাগ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নিখোঁজ ছিলেন কয়েকজন। এ ঘটনায় মোট ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত বছরের ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় এসকেএল-৩ কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম এল সাবিত আল হাসান ডুবে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়।