মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। এ কারণে চ্যানেল ঘুরতে ডুবোচরের বিভিন্ন স্থানে আটকে যাচ্ছে ফেরিগুলো। এ অবস্থায় নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে গতকাল শুক্রবার থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে ফেরি চলাচল। ফেরি বন্ধ থাকায় আজ শনিবার ঘাটে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। ঘাট এলাকায় আটকা পড়েছে পণ্যবাহী কয়েক শ ট্রাকসহ যানবাহন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেন বলেন, ঘাটের অবস্থা ভালো না। গতকাল সকাল ১০টা থেকেই সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয় ফেরি চলাচল। নাব্যতা সংকট নিরসন না হলে ফেরি সচল রাখা সম্ভব না।
সালাম হোসেন আরও বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং করার ওপর নির্ভর করে ফেরি চলাচল। তাই কবে নাগাদ এ সংকট সমাধান হবে, তা বলা যাচ্ছে না।
কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক উত্তম কুমার শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মায় নাব্যতা সংকট থাকায় গতকাল থেকে সব ফেরি চলাচল বন্ধ। সমস্যা সমাধানে খুব দ্রুত কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। ঘাটে আসা যানবাহনকে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। টার্মিনালে আড়াই শ ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় আছে।
সমস্যা সমাধানে সাত-আট দিন লাগতে পারে জানিয়ে বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের সহমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ বরকত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল নয়টার দিকে ছোট গাড়ি লোড দিয়ে দুটি ফেরি কাঁঠালবাড়ি ঘাটের উদ্দেশে ছাড়া হয়। ফেরি দুটি নাব্যতা সংকটের কবলে পরে চ্যানেল মুখে আটকা পড়ে। চায়না চ্যানেলও সমস্যা রয়েছে। ড্রেজিং বিভাগের কর্মীরা জানিয়েছেন আরও সাত-আট দিন সময় লাগবে।
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র জানায়, দুই সপ্তাহ ধরে নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান থাকায় ব্যাহত হয় ফেরি চলাচল। সংকটপূর্ণ অবস্থায় নৌপথটি সচল রাখতে ছোট ও কে-টাইপের মাঝারি চার-পাঁচটি ফেরি থেমে থেমে চলাচল করে। তবে গতকাল সকাল থেকে পদ্মার পানি আরও কমে গেলে ফেরিগুলো বারবার ডুবোচরে আটকে যেতে থাকে। এরপর নৌপথের দুর্ঘটনা এড়াতে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে ঘাট কর্তৃপক্ষ।
আজ সকাল ১০টার দিকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, ২ ও ৩ নম্বর ঘাটে কয়েকটি ডাম্ব ও দুটি রো রো ফেরি নোঙর করে রাখা হয়েছে। ঘাটের চারটি পয়েন্টে কোনো ফেরিতেই যানবাহন উঠতে দেখা যায়নি। ১ নম্বর ঘাট ভিআইপি যাত্রীদের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। তবে ১ নম্বর ঘাটে বেলা ১১টা পর্যন্ত কোনো ফেরি দেখা যায়নি। ঘাটের ট্রাক টার্মিনালে আটকা পড়েছে পণ্যবাহী কয়েক শ ট্রাক। তিনটি সংযোগ সড়কেই ছোট-বড় যানবাহনের দীর্ঘ সারি ছিল।
ঢাকাগামী যাত্রী আবুল খায়ের বলেন, ‘ঘাটে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল নিয়ে সকাল ছয়টায় এসেছি। একটি ফেরিরও দেখা পাইনি। কখন ফেরি আসবে, তা কেউ ঠিক করে বলতে পারছে না। ঘাটের লোকেরা বলে ফেরি বন্ধ, লঞ্চ বা স্পিডবোটে যেতে বলে। স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে কীভাবে যাব, খুব চিন্তায় পড়েছি।’
আজ বেলা ১১টার দিকে কাঁঠালবাড়ি ফেরি ঘাটের ১ নম্বর ঘাটে অপেক্ষায় ছিলেন ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাসের চালক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বরিশাল থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় ঘাটে এসেছি। ফেরির দেখা পাইনি। কী করব বুঝতে পারছি না। ঘাটে এসে চরম দুর্ভোগে পড়েছি।’
চট্টগ্রামগামী ট্রাকের চালক সোবাহান আলী বলেন, ‘ঘাটে এসেছি ১০ দিন। চার দিন হলো সিরিয়ালে বসে আছি। কখন ফেরিতে উঠতে পারব, তা কেউ ঠিক করে বলতে পারছে না।’
সমস্যার ব্যাপারে বিআইডব্লিটিএর ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাশরেকুল আরেফিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘পদ্মায় পানি ক্রমেই কমছে। চ্যানেলের মুখে প্রচুর পলি জমা হচ্ছে। এ ছাড়া চ্যানেলের পার থেকে নতুন করে আরও কয়েকটি ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আটটি খননযন্ত্র বসিয়ে প্রতিনিয়ত ড্রেজিংয়ের কাজ করছি। সমস্যা সমাধানের দ্রুত চেষ্টা করছি।’