নাটোর হানাদারমুক্ত দিবস আজ ২১ ডিসেম্বর। সারা দেশ ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের স্বাদ পেলেও নাটোরের মানুষ তা পায় বিজয়ের পাঁচ দিন পর।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নাটোরে বড় ধরনের কোনো লড়াই না হলেও একাধিক স্থানে চলে গণহত্যা। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদররা নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী, দত্তপাড়া, মোহনপুর, লালবাজার, কাপড়িয়াপট্টি, শুকলপট্টি, মল্লিকহাটি, বড়াইগ্রামের বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন, গুরুদাসপুরের নাড়িবাড়ি, সিংড়ার হাতিয়ানদহ, কলম এবং লালপুর উপজেলার গোপালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল চত্বরে গণহত্যা চালায়।
১৯৭১ সালের ৪ জুন নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী গ্রামের গণহত্যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংস ও হৃদয়বিদারক ঘটনার একটি। একাত্তরে নাটোর ছিল পাকিস্তানি সেনাদের ২ নম্বর সামরিক সদর দপ্তর (হেডকোয়ার্টার)। তৎকালীন সিও অফিসে (বর্তমানের ইউএনও অফিস) পাকিস্তানি সেনাদের সামরিক হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয়। ফলে ১৬ ডিসেম্বর থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার পাকিস্তানি সেনারা নাটোরে এসে জড়ো হতে থাকে। নাটোর পিটিআই স্কুল, আনসার হল, রিক্রিয়েশন ক্লাব, নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজ, নাটোর রাজবাড়ি, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি চত্বরের (উত্তরা গণভবন) ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেওয়া পাকিস্তানি সেনারা মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেও নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি চত্বরে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় ২০ ডিসেম্বর গভীর রাতে। ফলে ২১ ডিসেম্বর নাটোর পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয়।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ মিত্রবাহিনীর ১৬৫ মাউনটেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ করে। এদিন পাকিস্তানি বাহিনীর ১৫১ অফিসার, ১৯৮ জন জেসিও, সাড়ে ৫ হাজার সেনা, ১ হাজার ৮৫৬ জন আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ৯টি ট্যাংক, ২৫টি কামান, ১০ হাজার ৭৭৩টি ছোট অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে।