প্রথম দিনের সূর্য

নমুনা সংগ্রহে ভয় ছাপিয়ে তৃপ্তি

মুজিবুর রহমান
মুজিবুর রহমান

করোনার নাম শুনলেই মানুষ তখন ভয়ে তটস্থ হয়ে উঠত, নমুনা দিতেও আতঙ্ক বোধ করতেন। সবার মধ্যে উৎকণ্ঠা কাজ করছিল। এমন সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠাতেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মুজিবুর রহমান।

পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের বারইয়াকাটা গ্রামের মুজিবুর ২০০১ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। ২০১৪ সালে তাঁর চাকরি পাকা হয়। সেই থেকে তিনি পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্ত্রী রেহেনা বেগম একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। তিন সন্তানের মধ্যে তাঁর বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছেলে ঢাকা নটরডেম কলেজে এইচএসসিতে আর ছোট মেয়ে চট্টগ্রামের খাস্তগীর স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে।

মুজিবুর রহমান মাত্র দুই দিনের প্রশিক্ষণ শেষে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আতিকুল বাহার ও জহির উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ। এ কাজ করতে গিয়ে তাঁর ঝুলিতে কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা যে জমা পড়ল! তবে সব ছাপিয়ে করোনাযুদ্ধে মানুষের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসাকেই চিকিৎসাজীবনে পরম পাওয়া মনে করেন তিনি।

মুজিবুরের তিক্ত অভিজ্ঞতাও কম নেই। একদিন রাজাখালীর সুন্দরীপাড়া এলাকায় নারায়ণগঞ্জফেরত এক রাজনীতিকের ছেলের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপত্তির মুখে পড়েন। ওই ব্যক্তি নমুনা দিতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে পুলিশের সাহায্য নিয়ে তাঁর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। সে সময় গালাগালও কম শুনতে হয়নি মুজিবুরকে। তবে করোনা জয় করে যখন কেউ হাসিমুখে ঘরে ফেরেন, তখন ওই হাসিটাকেই প্রাপ্তি মনে করেন তিনি।

মুজিবুরের নেতৃত্বে পেকুয়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয় ৬ এপ্রিল থেকে। প্রথম দিন মুজিবুরের মধ্যে কাজ করছিল উত্তেজনা আর ভয়। বারবার মনে পড়ছিল তাঁর ছোট মেয়েটির কথা। সবশেষে আবেগ আর ভয়কে জয় করে ওইদিন ছয়জনের নমুনা সংগ্রহ করেন। এভাবে ১০ মে পর্যন্ত তিনি এবং তাঁর দল ২১১ জনের নমুনা নেন। এরমধ্যে ৬৪ জনের করোনা সনাক্ত হয়।

৩০ এপ্রিল পেকুয়াতে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হলে মুজিবুরের পরিবারের ওপরে ভর করে অসম্ভব আতঙ্ক। সবাই তাঁকে নমুনা সংগ্রহে যেতে বারণ করেন। কিন্তু অনড় মুজিবুর পেকুয়াকে নিরাপদ রাখতে তাঁকেই মাঠে থাকতে হবে বলে বিশ্বাস করতেন। সে বিশ্বাস সম্বল করেই তিনি নেমে পড়লেন মাঠে।

বাংলাদেশে করোনা সনাক্ত হওয়ার শুরু থেকে মুজিবুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়। নিয়মিত করোনা সংক্রান্ত ভিডিও ও লেখা শেয়ার ও পোস্ট করে পেকুয়ার মানুষকে সচেতন করছেন। উপসর্গ দেখা দিলে নমুনা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে আহ্বান করছেন। ইতিমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় মুজিবুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরও পাঁচজনকে নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রশিক্ষিতও করে তুলেছেন।


এস এম হানিফ: প্রথম আলোর চকরিয়া, কক্সবাজার প্রতিনিধি