নওগাঁ-৩ আসন

নবীন-প্রবীণের লড়াই হবে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-৩ (বদলগাছি ও মহাদেবপুর) আসনে মোট পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন। ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচন ছাড়া সব কটিতে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটবে না।

এবার ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী। তিনি নতুন মুখ। নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ ছলিমউদ্দিন তরফদার। তিনি গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কলস) হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৮৮ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৯০ হাজার ২৪৮ জন পুরুষ ও ১ লাখ ৯২ হাজার ২৪০ জন নারী। বদলগাছি ও মহাদেবপুর উপজেলায় মোট ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদ। এর মধ্যে উপজেলায় আটটি ও মহাদেবপুর উপজেলায় দশটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) রয়েছে। ধান-চালের জন্য বিখ্যাত মহাদেবপুর উপজেলা আর সবজির জন্য বদলগাছি উপজেলা। এবারের নির্বাচন ঘিরে প্রথম দিকে লোকজনের মধ্যে তেমন একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল না। তবে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় লোকজনের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। ভোটাররা শেষ পর্যন্ত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে প্রত্যাশা করছেন।

ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকীর বাবা আখতার হামিদ সিদ্দিকী এই আসনে একাধিকবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে আখতার হামিদ সিদ্দিকী জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হন। এ কারণে এ আসনটি ভিআইপি আসন বলে পরিচিতি পায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দলীয় ভিআইপি প্রার্থী আখতার হামিদ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মানবাধিকারকর্মী আকরাম হোসেন চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। তবে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছলিমউদ্দিন তরফদারের কাছে আকরাম হেরে যান। তখন দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় ছলিমউদ্দিন তরফদারকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এখন তিনি মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এবার তাঁকেই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এদিকে আখতার হামিদ মারা যাওয়ায় তাঁর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

অন্তত ২০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী তাঁর বাবা আখতার হামিদের পরিচয়ে ভোটারদের বিশেষ সহানুভূতি পাচ্ছেন। তিনি বয়সে তরুণ। তাঁর কাছে অনেক প্রত্যাশা। অন্যদিকে সাংসদ ছলিমউদ্দিন তরফদার এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন। এ কারণে তিনিও অনেক ভোটারের কাছে প্রিয়। তাই ভোটাররা আশা করছেন, দুজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। দুই দলের প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

মহাদেবপুর উপজেলার কচুকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা হায়দার আলী বলেন, এ আসনে মূলত নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে আসছে। এবারও নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। দিনে দিনে দুই দলের প্রচারণাও জমে উঠেছে।

বদলগাছি উপজেলার বিলাশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হেলাল হোসেন বলেন, নির্বাচনের প্রথম দিকে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল না। তবে এখন উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। এখানে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে তিনি মনে করছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছলিমউদ্দিন তরফদার বলেন, ‘এখানে নৌকার জোয়ার বইছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকার কোনো বিকল্প নেই। এর আগে এ আসনে যাঁরা সাংসদ ছিলেন তাঁদের চেয়ে অনেক বেশি উন্নয়ন করেছি। এ কারণে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের প্রচার-প্রচারণায় নানাভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমি বিজয়ী হব। আমি সাংসদ নির্বাচিত হলে মহাদেবপুর-বদলগাছি উপজেলায় উন্নয়নে আমার বাবার যে স্বপ্ন ছিল সেটি বাস্তবায়ন করব।’