নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ আছে, শিক্ষক প্রশিক্ষণের পরামর্শ

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে
ফাইল ছবি

মূল্যায়নে বড় পরিবর্তন এনে করা প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে জাতীয় শিক্ষাক্রমবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি। তবে কমিটির অনেকেই বলেছেন, এটি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ আছে। তাই এখন থেকেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা।

নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা নিয়ে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা কমিটির এই সভা। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, কয়েকজন শিক্ষাবিদ ও উপাচার্য, তিনজন সচিবসহ আরও বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সভায় উপস্থিত সবাই নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশংসা করেছেন। তবে কেউ কেউ বাস্তবায়ন নিয়ে চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আলাদা আলাদা না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) যৌথ সভায় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। কিছুদিনের মধ্যেই এনসিসিসির যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রমবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির একজন সদস্য হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী হাসিনা খান। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবসহ সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, সে কারণে এ রকম যুগোপযোগী একটি শিক্ষাক্রম খুব জরুরি। তবে এটির বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ আছে, সেটি নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও নতুন শিক্ষাক্রম গ্রহণ করা দরকার, তাই এটিকে তাঁরা অভিনন্দন জানিয়েছেন। চ্যালেঞ্জগুলো ধীরে ধীরে মোকাবিলা করতে হবে। এ জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা মতামত দিয়েছেন।

এর আগে গত মাসে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এনে প্রণয়ন করা শিক্ষাক্রমের রূপরেখাটি অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না, পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম—দুটোই থাকছে।

নতুন নিয়মে এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষা হবে। এরপর এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।

এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা রাখা হয়নি। একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি ঠিক হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন বিষয় পড়তে হয়। আর একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি বর্তমানে ঠিক হয় নবম শ্রেণিতে গিয়ে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছর থেকে প্রথম শ্রেণি ও ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য নির্ধারিত কিছুসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) চালু করা হবে। বিভিন্ন শ্রেণিতে তা পর্যায়ক্রমে চালু হবে পরের বছর থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

এর আগে ২০১২ সালে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়েছিল, যা এখন চলছে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা অর্জনের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এ জন্য এই শিক্ষাক্রমকে বলা হচ্ছে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম।