নান্দনিক রূপে সাজছে গুলশান-বনানী-বারিধারার লেক। যেখানে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পাবে যানজট–দূষণে হাঁসফাঁস নগরবাসী। এদিকে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে লেক এলাকায় গড়ে তোলা হবে উড়ালসড়ক–ওভারপাস। ১৬ কিলোমিটার নৌপথে চলবে নৌযান। তবে এ জন্য নগরবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত চার বছর।
গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আসছে এসব পরিবর্তন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেরাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রকল্পটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
গুলশান-বনানী-বারিধারায় লেকের ২৯৮ একর জায়গার উন্নয়নে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় ২০১০ সালে। তবে কাজ শুরু হয় বছর দুয়েক আগে। প্রথমে প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৪১০ কোটি টাকার। পরে প্রকল্পে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণেই খরচ হচ্ছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
গত শনিবার লেক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এরই মধ্যে লেকের চেহারা পাল্টাতে শুরু করেছে। বনানী ১৮ নম্বর সড়কের কাছে লেকের পানি এখন স্বচ্ছ টলমলে। বাঁধানো দুই পাড়ে জন্মেছে সবুজ ঘাস।
দেখা যায়, লেকের বনানী কবরস্থান থেকে বনানী ১১ নম্বর সেতু পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশের খননকাজ শেষ। লেকের এই অংশে পানি স্বচ্ছ। ১১ নম্বর সেতু থেকে বনানী ২৮ নম্বর পর্যন্ত, মহাখালী কাদেরিয়া মসজিদের কাছ থেকে নিকেতন পুলিশ প্লাজা পর্যন্ত এবং বনানী চেয়ারম্যানবাড়ির পেছনে ন্যাম ফ্ল্যাটের কাছ থেকে কড়াইল বস্তি পর্যন্ত খননকাজ হয়েছে। যেসব অংশে খননকাজ হয়নি, সেখানে পানি নোংরা, পাড়ে জমে আছে ময়লা–আবর্জনা। লেকের যে অংশে খনন হয়েছে, তা মাটির বাঁধ দিয়ে আলাদা করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, লেকের খনন করা অংশ পরিষ্কার রাখার জন্য বাঁধ দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। তিনি বলেন, গুলশান সোসাইটি লেকের আবর্জনা পরিষ্কারে সহায়তা করবে। প্রকল্পের ৭০ শতাংশ গুলশান লেকে পড়েছে, যে কারণে সংগঠনটির সঙ্গে তাঁরা চুক্তি করেছেন। বনানী ও বারিধারা সোসাইটি গুলশান সোসাইটিকে এ কাজে সহায়তা করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান সোসাইটির সদ্য বিদায়ী মহাসচিব ওমর শাহদাত প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই লেক পরিষ্কারের কাজ শুরু করবে সোসাইটি। এলাকার বাসিন্দারাই এর খরচ বহন করবেন।
যা থাকছে প্রকল্পে
লেক এলাকায় আড়াই কিলোমিটারের একটি গোলাকার উড়ালসড়ক থাকবে। গুলশান শুটিং ক্লাবের পেছন থেকে নিকেতন পর্যন্ত করা হবে এই উড়ালসড়ক। থাকবে আরও দুটি ওভারপাস। লেকের বিভিন্ন অংশে নয়টি সেতু থাকবে। দৃষ্টিনন্দন এসব সেতুতে হাতিরঝিলের মতো আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকবে।
লেকের পাড়ে নির্মাণ করা হবে প্রায় সোয়া পাঁচ কিলোমিটার সড়ক। এ ছাড়া লেক ভরাট না করে কলামের ওপর সড়ক নির্মাণ করা হবে ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সড়ক। একইভাবে কলামের ওপর থাকবে প্রায় ১২ কিলোমিটার হাঁটার পথ। এ ছাড়া লেকপাড়ে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার পায়ে চলার পথ থাকবে।প্রকল্পের আওতায়প্রায় ১৫ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণের কাজ হবে। বাঁধাই করা হবে পাড়। কড়াইল বস্তির সামনে, গুলশান শুটিং কমপ্লেক্সের পেছনে, গাউসুল আজম মসজিদের পাশে থাকবে বিনোদন পার্ক। অ্যাম্পিথিয়েটার করা হবে কড়াইল বস্তির সামনে লেকপাড়ে।
১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পানিপথ থাকবে লেকে। এই পথে ওয়াটার বাস ছাড়াও চলবে ওয়াটার ট্যাক্সি। মগবাজার মোড় এলাকায় হাতিরঝিল থেকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের পেছনে কালাচাঁদপুর যাওয়া যাবে নৌপথে। হাতিরঝিল থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্তও চলাচল করবে নৌযান। মগবাজারে হাতিরঝিলের মুখে, বাড্ডাসংলগ্ন গুদারাঘাট, কালাচাঁদপুর ও বনানী-১১ নম্বর সেতুর কাছে করা হবে চারটি বোট স্টেশন।এ জন্যই ৯টি সেতু উঁচু করে তৈরি করা হচ্ছে।
যোগাযোগব্যবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগে অধ্যাপক ও লেক প্রকল্পের পরামর্শক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে ছিল শুধু গুলশান লেক উন্নয়ন প্রকল্প। সেখানে যোগাযোগব্যবস্থার বিষয়টি যুক্ত ছিল না। পরে একনেক থেকে আমাদের কাছে মতামত চাওয়া হয়। সে অনুযায়ী নকশা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে পুরো এলাকার যানজট দূর করা সম্ভব হতে পারে। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে লেক এলাকা আরও মনোরম ও পরিবেশবান্ধব হবে।’
রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান বলেন, গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক হাতিরঝিলের চেয়ে আরও বেশি মনোরম ও দৃষ্টিনন্দন হবে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী চার বছরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে এবং নগরবাসী ও বাইরে থেকে আসা মানুষ এর সুফল পাবে।
যা থাকবে লেকে
• লেকপাড়ে প্রায় সোয়া ৫ কিলোমিটার সড়ক।
• কলামের ওপর নির্মাণ করা হবে ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সড়ক ও প্রায় ১২ কিলোমিটার হাঁটার পথ।
• ১৬ কিলোমিটার নৌপথ।
• লেকপাড়ে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার পায়ে চলার পথ।
• তিনটি পার্ক, ১টি অ্যাম্ফিথিয়েটার।
• ৯টি সেতু।
• আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালসড়ক, দুটি ওভারপাস।