দেশে এসে নতুন পাকা ঘরে ঘুমাবেন, এমন ভাবনা ছিল বাবুলাল হোসেনের। নতুন পাকা বাড়ি করতে যা খরচ হবে, তা তিনি বিদেশ থেকেই পাঠাবেন। স্ত্রী-সন্তানদের কাছে এমন আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। এ জন্য জমিও কিনেছিলেন। দেশে এসেছেন ঠিকই। ঘুমাবেনও নতুন ঘরে। লিবিয়ায় ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার ৯ দিন পর তাঁর লাশ এসেছে বাড়িতে। চলছে দাফনের প্রস্তুতি।
১৮ নভেম্বর লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির উপকণ্ঠ ওয়াদি রাবিয়ায় একটি বিস্কুট কারখানায় ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন বাবুলাল হোসেন (৪৫)। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভার বিশুপাড়া মহল্লায়।
বাবুলাল হোসেনের ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নাজিম উদ্দিন জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে একটি উড়োজাহাজে লিবিয়া থেকে তাঁর বাবার লাশ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সেরে তাঁর মা নাজমা বেগম লাশের কফিন গ্রহণ করেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে রাত সাড়ে নয়টায় লাশ বিশুপাড়া গ্রামে পৌঁছায়। এ সময় সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কফিন ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও এলাকার লোকজন। লাশ আসবে, এমন খবরে আগ থেকেই বাড়িতে তাঁরা অবস্থান করছিলেন।
নাজিম উদ্দিন জানায়, আজ শুক্রবার বেলা তিনটায় বাড়ির পাশে তাঁর বাবার লাশ দাফন করা হবে। জানাজায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। দ্রুত বাবার লাশ দেশে আনার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে নাজিম উদ্দিন। সাংবাদিকদের লেখালেখির কারণে লাশ দ্রুত দেশে এসেছে।
বাবুলালের স্ত্রী নাজমা বেগম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের নিজস্ব কোনো জমি না থাকায় পাশের জামগ্রাম নামের স্থানে বাড়ি করার জন্য পাঁচ শতক জমি কিনেছেন। সেখানে বাড়ি করার পর তিনি দেশে ফিরে নতুন ঘরে ঘুমাবেন বলে জানিয়েছিলেন। ১৮ নভেম্বর সকালে ওই জমি রেজিস্ট্রি হয়। ওই দিনই তিনি (বাবুলাল হোসেন) ড্রোন হামলায় নিহত হন।
স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, স্বামীই ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। অনেক ঋণ রয়েছে, কীভাবে সেগুলো পরিশোধ করবেন এবং চলবেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ জন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।