একাত্তরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন মঈদুল হাসান। পরবর্তীকালে তিনি লিখেছেন মূলধারা ’৭১ এবং উপধারা একাত্তর, মার্চ-এপ্রিল নামে দুটি বই। বিভিন্ন দেশে অবমুক্ত হওয়া মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র ঘেঁটে এবং নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি লিখছেন আরও একটি বই। তাঁর প্রকাশিতব্য সেই বইয়ের দশম অধ্যায়ের শেষ কিস্তি প্রকাশিত হলো আজ।
অল্প কথায় বলতে গেলে, দিল্লি বৈঠকে ভারতের কাছ থেকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি লাভ এবং আশু অস্ত্র সরবরাহের কোনো উন্নতি দেখেনি বাংলাদেশ। ভারতের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয় যে কিছু বন্ধুরাষ্ট্রকে বলা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জব্দ করা কিছু বিদেশি অস্ত্রের জোগান দিতে এবং তা এখন প্রক্রিয়াধীন। তবে বাংলাদেশের একটা অনুরোধ মেটাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে রাজি হয়েছিলেন। আর তা হলো নিয়মিত সম্প্রচার কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশকে নিজস্ব একটি ট্রান্সমিটার দেওয়া।
এই ‘টি’ সম্ভবত হবেন তাজউদ্দীন আহমদ, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। হাকসার তাঁকে (ইন্দিরা গান্ধী) অবহিত করেন যে এই বাঙালি নেতা তাঁদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সঙ্গে আলাপ করেছেন। হাকসার যোগ করেন, বাংলাদেশের জন্য সবকিছুই করা হচ্ছিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের দিকনির্দেশনা অনুসারে।
কিন্তু কূটনৈতিক স্বীকৃতি ও অস্ত্রের জোগান বিষয়ে আশাভঙ্গ এতটাই বড় ছিল যে দ্রুতই বাংলাদেশ মহলে ছড়িয়ে পড়ে প্রাথমিক কিছু সাহায্য-সহানুভূতি ছাড়া ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে বেশি কিছু করবে না। কাজেই বাংলাদেশের সামনে এক হতাশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ আরও অনেক দিন অপেক্ষা করতে থাকবে।
বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের মন্ত্রিসভার অধিকাংশের হতাশাব্যঞ্জক ধারণা সত্ত্বেও এই সময়েই প্রতিরোধযুদ্ধ নতুন করে শুরু করার প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় আরেকটা স্তরে। এ ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃতভাবে গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির বিষয়টিও বিবেচনায় ছিল। এ কারণে ভারতীয় পক্ষ সংবেদনশীল সামরিক বিষয়গুলোর আলোচনা শুধু তাজউদ্দীন আহমদের কাছেই সীমাবদ্ধ রাখে।
দিল্লির নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম ও লাইব্রেরিতে রক্ষিত ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সচিব পি এন হাকসারের প্রস্তুত করা এক সরকারি নথিতে বলা হয়েছে: অতিগোপনীয় ভারতীয় নথিতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী (ভারতের) গোপনে স্বঘোষিত বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেছেন। ৬ মে রাতে ‘টি’ নামে অভিহিত একজন নেতার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন।
এই ‘টি’ সম্ভবত হবেন তাজউদ্দীন আহমদ, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। হাকসার তাঁকে (ইন্দিরা গান্ধী) অবহিত করেন যে এই বাঙালি নেতা তাঁদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সঙ্গে আলাপ করেছেন। হাকসার যোগ করেন, বাংলাদেশের জন্য সবকিছুই করা হচ্ছিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের দিকনির্দেশনা অনুসারে।
জুন মাসে নৌকমান্ডো দলের জন্য নির্বাচিত ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়, যা শিগগিরই সংখ্যায় দ্বিগুণ করা হয়। অভিজ্ঞ নেভাল ক্রুদের ছোট দুটি দল সঙ্গে ছিল। নাবিক জুনিয়র অফিসার মিলিয়ে মোট ২০ জন। তাঁরা সবাই পাকিস্তান নৌবাহিনী থেকে পালিয়ে এপ্রিল মাসে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন স্বাধীনতাযুদ্ধে যুক্ত হতে।
ইতিমধ্যে প্রতিরোধযোদ্ধাদের সম্পর্কে হাকসারের মনে উচ্চ ধারণা তৈরি হয়েছিল। তিনি চেয়েছিলেন গেরিলাযুদ্ধভিত্তিক তুলনামূলক দীর্ঘ সময়ের জন্য একটা সাধারণ কৌশল, যা পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত রাখবে আর ক্রমান্বয়ে তাদের যুদ্ধ-পরিশ্রান্ত করে তুলবে। (এনএমএমএল, হাকসার পেপার্স, সাবজেক্ট ফাইল ২২৭ ও ১৬৬, হাকসার টু গান্ধী, ৬ মে ১৯৭১)
ওই সাক্ষাতের ফলাফল ছিল ভারতের বাংলাদেশ নীতির মুখ্য সমন্বয়ক পি এন হাকসার ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মধ্যে গেরিলাযুদ্ধভিত্তিক তুলনামূলক দীর্ঘ সময়ের জন্য একটা সাধারণ কৌশলবিষয়ক ঐকমত্য।
অন্য আরেকটি সূত্রে জানা যায়, তাজউদ্দীনের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর আলোচনার একপর্যায়ে পাকিস্তানের যুদ্ধচেষ্টাকে আরও দুঃসাধ্য করে তুলতে সমুদ্রপথে তাদের সরবরাহব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করার সম্ভাব্যতার প্রসঙ্গটি ওঠে। তাজউদ্দীনকে বলা হয়েছিল, যদি তিনি সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারেন, এমনকি তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের থেকেও, তাহলে ভারতীয় নৌবাহিনী গোপনে পূর্ব বাংলা থেকে আসা যুবকদের নিয়ে নৌকমান্ডো দল গড়ে তুলতে পারে, যারা পূর্ব পাকিস্তানের বন্দর ও জাহাজ চলাচলসুবিধাকে অন্তর্ঘাতমূলক আক্রমণের মাধ্যমে পঙ্গু করে দেওয়ার কাজে যথোচিতভাবে প্রশিক্ষিত হবে।
এটাও জানানো হয় যে জাতিসংঘ সনদের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ ভারত প্রতিবেশী দেশের বন্দরের প্রবেশমুখে জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে ওই দেশের বন্দরকে পঙ্গু করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনায় যুক্ত বলে সন্দেহের পাত্রেও পরিণত হতে চায় না।
এই পরিকল্পনার পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষার পেছনে আরেকটা জোরালো যুক্তি হাজির করা হয়েছিল, যেহেতু এই কমান্ডোরা খুবই সামান্য অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দীর্ঘ পথ সাঁতার দিয়ে পার হবেন এবং যেসব জনাকীর্ণ এলাকার মধ্য দিয়ে তাঁদের ভ্রমণ করতে হবে, সেখানেও তাঁদের খুবই গোপন থাকতে হবে। এই কাজে সফল হওয়ার জন্য আবশ্যিকভাবে অন্যদের অত্যন্ত সাবধান থাকতে হবে। অবশেষে তাজউদ্দীনকে আভাস দেওয়া হয় যে তিনি এমন প্রস্তাবে রাজি আছেন কি না।
তাজউদ্দীন গোপনীয়তা বজায় রাখতে সম্মত হন এবং প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন এ কথা বলে যে তাঁর বাহিনীপ্রধান কর্নেল ওসমানীকে তাঁর পাশে প্রয়োজন এই কাজের অগ্রগতি তদারক করার জন্য। ভারতীয়রা তাঁর সঙ্গে একমত হন। এটা ছিল যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, যা মধ্য আগস্ট থেকে মুক্তিযুদ্ধের এক নতুন গতিশীলতার সৃষ্টি করে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের গতিপথই পাল্টে দেয়।
কর্নেল ওসমানী শিগগিরই দুজন পেশাদার লোক নিয়োগ করেন। একজনকে সার্বিক কার্যক্রমের সমন্বয় এবং অপরজনকে প্রশিক্ষণকাজের নিরবচ্ছিন্ন তদারকির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেন। বাংলাদেশ বাহিনীর উপপ্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার এই পরিকল্পনা সমন্বয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত হন।
অন্যজন অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আহমদ রেজা নিরবচ্ছিন্ন তদারকির দায়িত্ব পান। পরের মাস, অর্থাৎ জুন থেকে রেজা পশ্চিমবঙ্গের পলাশীতে, হুগলি নদী তীরে অবস্থিত প্রশিক্ষণ শিবিরের কাজ সার্বক্ষণিকভাবে তদারক শুরু করেন।
এই দুজন এবং তাজউদ্দীন ও ওসমানী ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের অন্য কোনো নেতা ও ব্যক্তিই ডিসেম্বরে যুদ্ধের শেষ অবধি নৌকমান্ডোদের অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো কিছুই জানতে পারেননি। এই চারজনই নৌকমান্ডো প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিতদের বিস্তারিত বিবরণ এবং তাঁদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ সম্পর্কে অবগত থাকতেন। কিন্তু নির্বাচিতদের প্রশিক্ষণসংক্রান্ত সবকিছুই ছিল ভারতীয় নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। তাঁরাই তাঁদের পেশাদারি বিবেচনায় তাঁদের মধ্য থেকে সঠিক প্রার্থী বাছাই করতেন। তদুপরি অন্য বিষয়াদি, যেমন আক্রমণের লক্ষ্য নির্ধারণ, আক্রমণ পরিকল্পনা এবং অভিযান নিয়ন্ত্রণ—এসবই এককভাবে ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্তৃত্বে ছিল।
জুন মাসে নৌকমান্ডো দলের জন্য নির্বাচিত ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়, যা শিগগিরই সংখ্যায় দ্বিগুণ করা হয়। অভিজ্ঞ নেভাল ক্রুদের ছোট দুটি দল সঙ্গে ছিল। নাবিক জুনিয়র অফিসার মিলিয়ে মোট ২০ জন। তাঁরা সবাই পাকিস্তান নৌবাহিনী থেকে পালিয়ে এপ্রিল মাসে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন স্বাধীনতাযুদ্ধে যুক্ত হতে।
তাঁদের মধ্যে আটজন বাঙালি নৌসেনার একটি ছোট দল এপ্রিলের শুরুতে পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তরের জন্য ফ্রান্সে নির্মীয়মাণ একটি নতুন সাবমেরিনে কর্মরত ছিলেন। এ অবস্থায় গোপনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন। ভারতের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে তাঁরা স্বাধীনতাযুদ্ধে যোগ দেওয়ার ব্যগ্রতা প্রকাশ করেন।
দ্বিতীয় দলটির সদস্যরা তারও আগে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং তথাকথিত আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে অভিযুক্ত ছিলেন। তাঁরা পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরু হওয়ার পরপর এবং তখন থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।
নৌকমান্ডো দলের জন্য নির্বাচিতদের বড় অংশ জোগাড় করা হয় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ছাত্রদের মধ্য থেকে, যাঁরা আসেন পূর্ব বাংলার বড় নদীগুলোর আশপাশের অঞ্চল থেকে। বাল্যকাল থেকেই তাঁদের ছিল চমৎকার সন্তরণপটুতা এবং এমন সব পরিবার থেকে, যাঁদের কেউ না কেউ পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নিহত, আহত কিংবা নিগৃহীত হয়েছেন।
নিয়োগের পর প্রশিক্ষণ এবং তারপর অভিযান পরিকল্পনার সব বিষয় দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রস্তুত হয়েছিল ভারতীয় নৌ গুপ্তচর সংস্থার বাঙালি প্রধান মিহির রায়ের তত্ত্বাবধানে, যাঁর ছিল বাঙালি মন-মানস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা এবং একই সঙ্গে ছিল তাঁদের জাতীয় পরিচয়ের শ্লাঘাকে আহত না করে কাজ করিয়ে নেওয়ার মতো ভারসাম্যপূর্ণ বিচারবোধ।
শুরু হয় তাঁদের উপযুক্ত নৌকমান্ডো হিসেবে রূপান্তরের দীর্ঘ ও কষ্টকর প্রশিক্ষণ। প্রতিদিন গড়ে তাঁদের প্রায় ১৬ ঘণ্টা সাঁতরাতে হতো। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল শত্রুর চোখকে ফাঁকি দিতে পেঁপেগাছের পাতার নল ও বাঁশের নালি দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাসের সাহাযে৵ ডুবসাঁতারের প্রশিক্ষণ। মাঝেমধ্যে তাঁদের পেটে পাঁচ কেজি ওজনের ইট অথবা কাদামাটি বেঁধে দেওয়া হতো সম-ওজনের লিমপেট মাইন বহনের কসরত হিসেবে।
সবচেয়ে বিপজ্জনক ছিল রাতের বেলায় অন্ধকারে কয়েক ফুট পানির নিচে মাইনগুলোকে জাহাজের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রশিক্ষণ। মিহির রায় স্মৃতিচারণা করেছেন, ‘এই সব কাজ দাবি করত অসাধারণ মানসিক ও শারীরিক কষ্ট স্বীকারের অশেষ ক্ষমতা, সৌভাগ্যক্রমে যা পূর্ব বাংলার যুবকদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ছিল। ফলে প্রারম্ভিকভাবে এই কাজের নেতৃত্ব নৌবাহিনীর লোকদের হাতে থাকলেও দ্রুতই তা প্রচণ্ডভাবে উদ্দীপ্ত এসব যুবক নিয়ে নেয়।’ (ভাইস অ্যাডমিরাল মিহির কে রায়, ওয়ার ইন দ্য ইন্ডিয়ান ওশান, পৃ. ১৫২, ল্যান্সার পাবলিশার্স, নয়াদিল্লি)
এত সব কিছু এত দ্রুত ঘটে ওঠা সম্ভব হয়েছিল দেশের নেতৃত্বদানকারী দুজন প্রধান ব্যক্তির মধ্যে ক্রমবর্ধমান বোঝাপড়ার কারণে। পি এন হাকসার প্রতিনিধিত্ব করছিলেন ভারত সরকারের আর তাজউদ্দীন আহমদ বিভিন্ন ধরনের চাপের মধ৵ দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। এপ্রিলের ৩ তারিখ দিল্লিতে তাঁদের প্রথম বৈঠক থেকেই, যখন তাজউদ্দীন নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ প্রশ্নে দ্বিধান্বিত ছিলেন, তখন থেকেই তাঁদের মধ্যে ক্রমাগত বোঝাপড়ার নৈকট্য বাড়তে থাকে। কারণ, তাঁদের দুজনেরই ছিল বাস্তব পরিস্থিতি অনুসারে এগিয়ে চলার উদ্ভাবনী ক্ষমতা। উভয়েই ছিলেন পরস্পরের জাতীয় স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
হাকসার জানতেন বাংলাদেশ মন্ত্রিসভার ভেতর তাজউদ্দীন অধিকাংশ সময় ছিলেন নিঃসঙ্গ। কিন্তু তিনিই একমাত্র ব৵ক্তি, যিনি স্বাধীনতা অজ৴নের প্রশ্নে সম্পূর্ণ আপসহীন।
অন্যদিকে তাজউদ্দীন জানতেন, ভারত তখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে অপ্রস্তুত। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তানের যুদ্ধ করার ক্ষমতা হ্রাস করার জন্য গোপনীয়তা বজায় রাখার নিশ্চয়তা পেলে আর সব ক্ষেত্রে সাহায৵ দিতে প্রস্তুত। (শেষ)