বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য পাঁচটি দেশের সমন্বয়ে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। আজ সোমবার সকালে ব্রুনেইয়ের সুলতানের সরকারি বাসভবন ইস্তানা নুরুল ইমান-এ ব্রুনেইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়ার সঙ্গে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রস্তাব করেন।
আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেন, প্রস্তাবিত আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (সিয়াকো) সদস্য হবে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেই।
পররাষ্ট্রসচিব জানান, প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ব্রুনেইয়ের সুলতান আশ্বস্ত করেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে ‘অনুকূল বিবেচনা’ করবেন।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকটসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগসংক্রান্ত বিষয়গুলো স্থান পায়। বাংলাদেশ ও ব্রুনেইয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও জোরদার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আরও কিছু প্রস্তাব করেছেন।
মো. শহীদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং এ লক্ষ্যে একটি অগ্রাধিকার বাণিজ্য ব্যবস্থার সম্ভাব্যতা যাচাই করার প্রস্তাব করেছেন। শেখ হাসিনা দুদেশের মধ্যে যৌথ কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দেন। তিনি পাট ও পাটজাত পণ্য, সফটওয়্যার, কৃষিপণ্য, সিরামিক ও টেবিলওয়্যার, জাহাজনির্মাণ শিল্প ও পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার শিল্প পার্ক স্থাপন করছে যেখানে ব্রুনেইয়ের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারে। তিনি দ্বৈত কর পরিহার করার পাশাপাশি পারস্পরিক প্রচার এবং বিনিয়োগের সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ব্রুনেইয়ের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে অগ্রাধিকার দেন এবং বলেন, দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য পেশাজীবী ও ফার্মাসিউটিক্যালসের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সহযোগিতা গড়ে তোলা যেতে পারে।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সুলতান উভয়ই বাংলাদেশ ও ব্রুনেইয়ের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল শুরুর কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী মানবিক কর্মসূচি ও জ্ঞান বিনিময়ের মতো অস্ত্রশস্ত্রবিহীন ক্ষেত্রে সামরিক সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। এ প্রসঙ্গে সুলতান বিশ্বজুড়ে সমস্যাক্রান্ত অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
ব্রুনেইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়া গত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ এবং চতুর্থবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। সুলতানের উদ্ধৃতি দিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এটি জনগণের রায় এবং বিজয়টি হলো বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতি, যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে।’ একই সঙ্গে সুলতান বলেন, ব্রুনেই ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে ও সম্প্রসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সফর একটি মাইলফলক।
সুলতান বলেন, দুদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির এক বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ব্রুনেই ও বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি, খাদ্য, জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ এবং যোগাযোগের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা তৈরি করা যেতে পারে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বলকিয়া রোহিঙ্গা সংকটের ‘সঠিক ও স্থায়ী সমাধান’ করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা উচিত যাতে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারে।’
শহীদুল হক বলেন, এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আসিয়ানের বড় ধরনের অংশগ্রহণ কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী সুলতানের সহযোগিতাও কামনা করেন। আসিয়ান সম্পর্কে সুলতান আশ্বাস দেন, বাংলাদেশ এবং আঞ্চলিক ফোরামের সহযোগিতাকে শক্তিশালী করতে ব্রুনেই সহায়তা প্রদান করবে।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আলোচনাকালে শেখ হাসিনা ব্রুনেইয়ের সুলতানকে তাঁর স্ত্রীসহ বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
পররাষ্ট্রসচিব আরও বলেন, এর আগে, সুলতান ব্রুনেইয়ের ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় প্রোটোকল ভেঙে প্রাসাদের সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান।
ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও লেখক নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।