রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলার তদন্তের ১৯ দিনেও উল্লেখ করার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। এত দিন পরে এসে পুলিশ বলছে, ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছে। ‘সেই ধারণার’ ভিত্তিতে তাদের ধরার চেষ্টায় আছে।
তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভও বাড়ছে। রেজাউল করিম হত্যার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গতকাল বুধবারও মানববন্ধন করেছেন।
একই দাবিতে আগামী শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে শিক্ষক-ছাত্র সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আজম শান্তনু। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের উপস্থিতিতে সংহতি ও মতবিনিময় সভাও অনুষ্ঠিত হবে।
শাহ আজম বলেন, ‘আমরা আগে শুনব, এ শিক্ষক হত্যার বিচারের বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী। এরপর আমাদের দাবির বিষয়টি তাঁদের কাছে তুলে ধরব।’
গত ২৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শহরের শালবাগান এলাকায় নিজ বাসার সামনে রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই দিন রাতে তাঁর ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে বোয়ালিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছিল। তাঁদের মধ্যে দুজনকে পাঁচ দিন আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনজনকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। অবশ্য হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেননি তাঁরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রিমান্ডে নেওয়া আসামিদের কাছ থেকে পুলিশ কিছু তথ্য পেয়েছে। এ তথ্য নিয়ে কাজ চলছে। সব মিলিয়ে তারা একটা ধারণা পেয়েছে যে কারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এখন তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার করতে পারলেই দৃশ্যমান একটা কিছু বলা যাবে। তার আগ পর্যন্ত নতুন কিছু বলা যাচ্ছে না।
রেজাউল করিম সিদ্দিকীর ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ আশ্বাস দিচ্ছে। এখন ভেতরে কী হচ্ছে, বাইরে থেকে তো কিছু বোঝা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে গতকাল মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বিচারের দাবিতে প্রতিদিন এখানে দাঁড়াচ্ছি। ...মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে প্রশাসন বলে, কাজ চলছে বা তদন্তের স্বার্থে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে কী কাজ চলছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না। অন্যান্য হত্যা মামলার মতো এ মামলাও অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে কি না, তা-ও বুঝতে পারছি না।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আজম শান্তনু, জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ফারুকী, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমাইল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুবাইদা আখতার ও সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন। এ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিনসহ তিন শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন শেষে সেখানে থেকে একটি মৌন মিছিল বের করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।