ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের নামে নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছিলেন এস এম ডি জসীম উদ্দিন চিশতী নামের এক ব্যক্তি। পরে ই–কমার্স ‘ধামাকা’ শপিং নামের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্যের লোভনীয় অফার ও ভার্চ্যুয়াল সিগনেচার কার্ড বিক্রির প্রলোভন দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৮০৩ কোটি টাকা আদায় করেন। সেখান থেকে তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের অন্যরা ১১৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা অন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করে মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এ অভিযোগে ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের মালিক জসীম উদ্দিনসহ পাঁচজন এবং তাঁদের তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আজ বৃহস্পতিবার বনানী থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে সিআইডি।
এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দিনের স্ত্রী সাইদা রোকসানা খানম, জসীম উদ্দিনের তিন ছেলে একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তাশফির রেদোয়ান চিশতী, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিমউদ্দীন আসিফ, পরিচালক মাশফিক রেদোয়ান চিশতী ও পরিচালক সাফওয়ান আহমেদ।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ই–কমার্স ধামাকার বিরুদ্ধে প্রথমে অনুসন্ধান করে সিআইডি। পরে প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য পাওয়ার পর তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তিনি বলেন, তদন্তের পর্যায়ে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
মামলার পর্যালোচনার বরাত দিয়ে সিআইডি সূত্র জানায়, জসীম উদ্দিন ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড চালানোর জন্য ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে ডেভেলপমেন্ট সফটওয়্যার, টেলিকম সিস্টেমস, স্মার্টফোন,আইপি ফোন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, কমিউনিকেশন আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার নামে নিবন্ধন নেন। গত বছর অক্টোবর থেকে অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য ‘ধামাকা শপিং’ নামে অবৈধভাবে ই–কমার্স ব্যবসা চালু করেন তিনি। অনুসন্ধানে সিআইডি জানতে পারে, এই সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করার জন্যই ধামাকা শপিং নাম ব্যবহার করে। ইনভেরিয়েন্ট টেলিকমের সঙ্গ সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ধামাকা শপিংয়ের নামে কোনো অনুমোদন, নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, বিআইএন, ব্যাংক হিসাব বা দালিলিক ভিত্তি ছাড়াই প্রতারণার উদ্দেশ্যে ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করেন। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে নিরীহ জনসাধারণের অর্থ আত্মসাৎ করাই ছিল প্রতারক চক্রটির মূল উদ্দেশ্য।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, ধামাকা পরিচালনাকারীরা ঢাকার একোয়া টাওয়ার, বীর উত্তম এ কে খন্দকার সড়ক, মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থান করে অবৈধভাবে ধামাকা শপিং ই-কমার্স সাইট/আপসের মাধ্যমে কথিত ব্যবসা পরিচালনা করে পাঁচ লক্ষাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন সময় অস্বাভাবিক কম মূল্যে মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের প্রলোভন দেখায়। পরে গ্রাহকদের কাছ থেকে তিনটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৮০৩ কোটি ৫১ লাখ ৯১ হাজার ৬৩ টাকা গ্রহণ করে ধামাকা। প্রথম দিকে অল্পসংখ্যক গ্রাহককে কিছু পণ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে অধিকসংখ্যক গ্রাহক আকৃষ্ট করে ধামাকা। পরে তাদের পণ্য সরবরাহ না করে প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণা করে। অন্যদিকে ৬০০ সরবরাহকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনার নামে ২০০ কোটি টাকার পণ্য গ্রহণ করে মূল্য পরিশোধ না করেও প্রতারণা করে ধামাকা।
ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব থেকে প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা পরস্পর যোগসাজশে তাঁদের মালিকানার প্রতিষ্ঠান ইনভেরিয়েন্ট টেকনোলজিস লিমিটেড, মাইক্রো ট্রেড ও মাইক্রো ট্রেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজে লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবগুলোতে ১১৬ কোটি ৬৮ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯৬ টাকা স্থানান্তর করে মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন।