একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৯ দিন। দম ফেলার ফুরসত নেই প্রার্থীদের। রাজধানীর ১৫টি আসনের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। কিন্তু সেভাবে মাঠে দেখা যাচ্ছে না ধানের শীষের প্রার্থীদের। এর মধ্যে অন্তত চারজনকে একবারের জন্যও মাঠে দেখা যায়নি।
ধানের শীষের এসব প্রার্থীর অভিযোগ, বিভিন্ন মামলায় জামিন থাকার পরও তাঁদের আটক করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ ছাড়া গণসংযোগে নামলেই প্রার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে। হামলার শিকার হচ্ছেন নেতা–কর্মীরা। তাই আপাতত তাঁরা মাঠে নামছেন না। তবে তাঁরা ঠিক কবে তাঁরা মাঠে নামবেন, সে ব্যাপারেও স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
দলীয় সূত্র ও নির্বাচনী এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো মাঠে না নামা ধানের শীষের প্রার্থীরা হলেন ঢাকা-১০ আসনের আবদুল মান্নান, ঢাকা-১২ আসনের সাইফুল আলম, ঢাকা-১৫ আসনের শফিকুর রহমান ও ঢাকা-১৬ আসনের আহসান উল্লাহ।
গত বুধবার ধানমন্ডিতে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী আবদুল মান্নান। তাঁর অভিযোগ, সাদাপোশাকে পুলিশ সব সময় তাঁর বাসার চারপাশে অবস্থান করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এতে নেতা-কর্মীরাও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। তাই প্রচারে নামতে পারছেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, গণসংযোগে নামতে তাঁর আরও দু–এক দিন সময় লাগবে।
ঢাকা–১০ আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস।
এদিকে ঢাকা-১২ আসনের প্রার্থী সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর তাঁর প্রায় ৬০ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। নারীনেত্রীদের বাসাবাড়িতে গিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা নেই এমন নেতা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমর্থকদের বাসায় গিয়েও পুলিশ হয়রানি করছে। ছোট পরিসরে কয়েক দিন ধরে যেসব নারী কর্মী প্রচারে নেমেছিলেন, তাঁদের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। কয়েকজনকে হেনস্তা করা হয়েছে। পোস্টার লাগানোর সময় তাঁর এক কর্মীর দুই হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি তাঁর জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই আপাতত প্রচারে নামছেন না।
কবে প্রচারণায় নামবেন—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।
এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
মাঠে নেই ঢাকা-১৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমানও।
জামায়াত জানায়, পোস্টার ছিনতাই ও নেতা-কর্মীদের আটকের প্রতিবাদে শফিকুর রহমান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একাধিক চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। এখনো নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়িতে তল্লাশি, সমর্থকদের হয়রানি ও আটক করা হচ্ছে। তাই শফিকুর রহমান বাধ্য হয়ে প্রচারণা থেকে বিরত থাকছেন। তবে তাঁরা কেন্দ্রভিত্তিক বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন।
এই আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার।
ঢাকা-১৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আহসান উল্লাহ বলেন, পুলিশ তাঁকে আটক করতে তৎপর। তাই তিনি প্রচারে নামছেন না। তাঁর দাবি, ধানের শীষের পোস্টার লাগানোর সময় একজনের পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা দুজনকে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একজন–দুজন করে বাসাবাড়িতে তাঁর পক্ষে ভোট চাইছেন।
এই আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ইলিয়াস মোল্লাহ্।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের নামতে দিচ্ছে না। কেবল ঢাকা নয়, সারা দেশের চিত্রই তো এমন।