ধর্ষণ মামলায় দ্রুত মেডিকেল অ্যাভিডেন্স সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় কী জন্য সাজা কম হচ্ছে, সেটি খুঁজে বের করতে হবে। শনিবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের বর্ধিত ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘একটি কথা এসেছে যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় সাজার হার মাত্র ৩ শতাংশ। কী কারণে তিন পার্সেন্ট হচ্ছে, এ বিষয়টি আমাদের বের করতে হবে। দরকার হলে এর ওপর ওয়ার্কশপ করা যেতে পারে। এটির ওপর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে। কারণ কোর্ট বিচার করবে অ্যাভিডেন্সের ওপরে। যথাযথ অ্যাভিডেন্স না থাকলে কিন্তু সাজা দেওয়া অসম্ভব। কোর্ট সাক্ষী বিবেচনা করে তারপর সাজা দেবে। এ ক্ষেত্রে হতাশ হলে চলবে না। কারণ খুঁজে বের করে এর ওপর কাজ করতে হবে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ধর্ষণের মামলায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো মেডিকেল অ্যাভিডেন্স। আমাদের এখানে সর্বোচ্চ তিন দিন, চার দিন, সাত দিন ও পনেরো দিন পরে যাচ্ছে মেডিকেল অ্যাভিডেন্স। অর্থাৎ মেডিকেল পরীক্ষা হচ্ছে অনেক পরে। এতে আলামত থাকছে না, যথাযথ অ্যাভিডেন্স কোর্টে আসছে না। সুতরাং এসব ব্যাপারে কোর্টকে অভিযুক্ত করার আগে দেখতে হবে গলদটা কোথায়। সেই গলদ শনাক্ত করতে হবে।’
ধর্ষণের সঠিক বিচারের জন্য চিকিৎসা-সংক্রান্ত শক্তিশালী প্রমাণাদি দরকার উল্লেখ করে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা যদি ধর্ষণের মামলার মেডিকেল অ্যাভিডেন্স দ্রুত সংগ্রহ করতে পারি বা শক্তিশালী অ্যাভিডেন্স যদি কোর্টে আসে, তাতে আসামির খালাস পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। সুতরাং এ ধরনের মামলায় মেডিকেল অ্যাভিডেন্স সংগ্রহের ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে।’
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে কারাগারের সঙ্গে লিগ্যাল এইড অফিসের নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন, লিগ্যাল এইডের মামলা দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করতে আদালতকে যত্নশীল হতে, জেলা জজদের বিভিন্ন সময়ে কারাগার পরিদর্শন করা এবং জেল আপিল নিষ্পত্তির জন্য পৃথক একাধিক বেঞ্চ গঠনের বিষয়টি বিবেচনার প্রসঙ্গসহ বেশ কয়েকটি দিক উঠে আসে।
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ‘বিচার প্রার্থীদের প্রত্যাশা ও জেল আপিল মামলা পরিচালনায় আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের করণীয়’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে সহায়তা দিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। প্রবেশন অব অফেন্ডারস অর্ডিন্যান্স আইন মানা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই আইন সম্পর্কে সব জজ সাহেবের জানার কথা। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় আমাদের জজ সাহেবেরা এই আইনের প্রয়োগ করেন না।’
সভাপতির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশাটা অনেক বেশি। আইনে কী আছে, সেটা অনেকে বুঝতে চান না।
ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘আইনি সহায়তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মামলা হচ্ছে জেল আপিল-সংক্রান্ত। সাধারণত জেল আপিল করে থাকেন নিতান্ত দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষ। পয়সা থাকলে তাঁরা নিয়মিত আপিল করতেন। এসব আপিল দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মামলা ত্রুটিপূর্ণ। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় এসব মামলা জেল আপিল হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়নি। অবস্থা নিরসনে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি ও কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় ও সম্মিলিত প্রয়াসের প্রয়োজন আছে।’
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্যসচিব টাইটাস হিল্লোল রেমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রাব্বানী, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মো. জাফরোল হাছান প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে আসা জেলা ও দায়রা জজ, জেল সুপার ও আইনজীবী উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।