ধর্মের প্রতি গভীর আস্থার কথা বলেছেন তরুণেরা। প্রথম আলোর তারুণ্য জরিপে দেখা যাচ্ছে, তরুণদের বড় অংশই ধর্মচর্চা করেন। আর বেশির ভাগ তরুণ মনে করেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ উদার। তাঁরা আরও মনে করেন, তরুণদের মধ্যে ধর্মচর্চা আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে ধর্মান্ধতা ক্রমে কমছে।
প্রথম আলোর তারুণ্য জরিপ ২০১৯-এ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৬ শতাংশ ছিলেন মুসলমান। আর ৪ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। উভয় ধর্মাবলম্বীদের ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা ধর্মচর্চা করেন।
মুসলমান তরুণদের বেশির ভাগ ধর্মচর্চা করলেও তাঁরা যে দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, তা নয়। কেউ দিনে এক-দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, কেউ জুমার নামাজ আদায় করেন বা রমজান মাসে রোজা রাখেন। মুসলমান তরুণদের ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শহরের চেয়ে গ্রামের তরুণেরা এবং ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি পড়েন।
দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, এমন তরুণ ২০১৭ সালের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৭ সালে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ বলেছিলেন, তাঁরা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন।
এবারের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এক চতুর্থাংশ বলেছেন, তাঁরা দিনে তিন বা চার ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। ১১ দশমিক ২ শতাংশ এক বা দুই ওয়াক্ত পড়েন। প্রতিদিন নামাজ পড়েন না কিন্তু শুক্রবার জুমার নামাজ পড়েন, এমন তরুণের সংখ্যা ২১ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ৪ দশমিক ৩ শতাংশ জানিয়েছেন, দৈনন্দিন নামাজ আদায় না করলেও তাঁরা রমজান মাসে রোজা রাখেন।
আবার এবারের জরিপে বেশির ভাগ তরুণই মনে করেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ উদার। তবে ১৭ শতাংশ মনে করেন, বাংলাদেশ রক্ষণশীল। ৯ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ বলেছেন, এ বিষয়ে তাঁরা জানেন না। ২০১৭ সালের জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের ২ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছিলেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের দেশ রক্ষণশীল।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেশকে উদার মনে করা তরুণের সংখ্যা কমেছে। ২০১৭ সালে ৯৭ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ মনে করতেন দেশ উদার। আর এখন সেটি ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ।
গুণগত জরিপে অভিমত
সাক্ষাৎকার পর্বে ১৪ তরুণের ১০ জনই বলেছেন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আড্ডা—এসব কারণে তরুণেরা ধর্ম থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। এ ছাড়া পরিবার থেকে যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা না করা, তরুণদের পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুসরণ এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের ইচ্ছা ইত্যাদি কারণেও অনেকে ধর্ম থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। এখন অনেক তরুণ ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপরীতে যুক্তি খোঁজেন, প্রশ্ন তোলেন এবং শেষ পর্যন্ত ধর্মচর্চা বাদ দেন।
আবার বাকি অংশ মনে করছেন, তরুণদের মধ্যে ধর্মচর্চা আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে ধর্মান্ধতা ক্রমে কমছে। তাঁরা বলেছেন, সব এলাকায় মাদ্রাসার সংখ্যা বাড়ছে এবং অনেক পরিবার সন্তানদের স্কুলের পরিবর্তে মাদ্রাসায় পাঠাচ্ছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা এখনো ধর্মের ব্যাপারে আগ্রহী। তাঁরা খুব বেশি ধর্মচর্চা না করলেও অন্তত জুমার নামাজ আদায় করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দীর্ঘকাল থেকে সদাচার হিসেবে ধর্মচর্চা চলে আসছে। ধর্মের একটি বড় পরিধি আছে। প্রথম আলোর জরিপে যে ফল উঠে এসেছে, তাতে অবাক হওয়ার কারণ নেই।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, ধর্মান্ধতা আর ধর্ম পালন এক বিষয় নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে, সচেতনতা বাড়ছে। ধর্ম পালনের সঙ্গে সন্ত্রাস যেন এক না হয়ে যায়, যাতে তরুণদের কেউ বিভ্রান্ত করতে না পারে, সে বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে, এটা ইতিবাচক। সচেতনতা আরও বাড়ানো দরকার।