ধর্মঘট প্রত্যাহারের ‘উপায়’ খুঁজছিলেন ট্রাকমালিকেরা, ‘সুযোগ’ দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

টানা চার দিন ধরে চলছে ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহনের ধর্মঘট। তিন দফা দাবির কোনোটিই মানেনি সরকার। ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে সংগঠনগুলোর সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে সেভাবে যোগাযোগও করা হয়নি। কিন্তু ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায়ও নেই এই মালিকেরা। এ জন্য সরকারের সঙ্গে কোনোরকমে একটি বৈঠকের পর কিছু আশ্বাস নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ‘উপায়’ খুঁজছিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সুযোগ করে দিয়েছেন।

আজ সোমবার রাতে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রত্যাহার হতে যাচ্ছে পণ্যবাহী যানবাহনের ধর্মঘট। রাত আটটায় পণ্য পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিক নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠকে বসবেন। এরপর ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাত থেকেই পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল শুরু হবে। তবে সারা দেশে খবর পৌঁছানো এবং পুরোদমে চালু হতে কাল সকাল পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফ মাহমুদ বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেন। সরকার ও পণ্য পরিবহনে যুক্ত সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার লিটারপ্রতি ডিজেলের মূল্য ১৫ টাকা বৃদ্ধির পর ওই দিন রাতেই ধর্মঘটের ডাক দেন পণ্য পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকেরা। পরে তাঁদের সঙ্গে বাস-মিনিবাসের মালিক-শ্রমিকেরাও যুক্ত হন। গতকাল রোববার বাসের ভাড়া বৃদ্ধির পর গণপরিবহনের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু পণ্যবাহী যানবাহনের ধর্মঘট আজও বহাল রয়েছে।

পণ্য পরিবহন খাতের মালিকেরা তিন দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে—জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর সেতুর বর্ধিত টোল প্রত্যাহার এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় পণ্যবাহী যান থেকে টোল আদায় বন্ধ।

সরকার ও পরিবহন খাতের সূত্রগুলো বলছে, প্রথম তিন দিন ধর্মঘট পালনের মধ্যেই অনানুষ্ঠানিকভাবে পণ্য পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিক নেতারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেন। এতে নেতারা নিশ্চিত হন যে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য এবং দুই সেতুর বর্ধিত টোল প্রত্যাহার করবে না সরকার। পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। কিন্তু জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে এ মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে তারা ধর্মঘটে থাকা পণ্য পরিবহন নেতাদের নিয়ে বৈঠক করার প্রয়োজন মনে করেনি। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পণ্য পরিবহন খাতের নেতাদের সেভাবে যোগাযোগ করাই সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়া সুচিন্তিত হবে না ভেবে সরকারের কোনো দপ্তরের সঙ্গে একটা বৈঠকের চেষ্টা করছিলেন পণ্য পরিবহন খাতের নেতারা। শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ সুযোগ করে দিয়েছেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। সকালে নিজ বাসায় ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের জানান, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের ধর্মঘটের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছেন।

সরকারি সূত্র বলছে, পণ্য পরিবহনের নেতাদের দাবির মধ্যে শুধু সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় পণ্যবাহী যান থেকে টোল আদায় বন্ধ করার বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিতে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাকি দুই দাবির বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার আশ্বাস দিতে পারেন। আর এমন আশ্বাস পেলেই বৈঠক থেকে বেরিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা আসতে পারে।

বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরি ও প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা মানুষকে দুর্ভোগে ফেলতে চাননি। কিন্তু করোনা মহামারির ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা, তখনই জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। যা তাঁদের ব্যবসার বড় ক্ষতি করে দিয়েছে। রাতের বৈঠকে সুরাহা হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক এজেন্সির সভাপতি মকবুল হোসেনও প্রথম আলোকে জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে একটা ফয়সালা হতে পারে।

দুটি সংগঠনই রাজধানীর তেজগাঁও টার্মিনালকেন্দ্রিক। এটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় পড়েছে। এ জন্য এই দুই সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগে থেকেই জানা-শোনা। ধর্মঘট ডাকার পর শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে দেখা করেন ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক এজেন্সির নেতারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দেন। তবে এতে ফল মিলবে না বলেও জানিয়ে দেন তিনি।

পণ্য পরিবহনে যুক্ত সূত্র বলছে, এর মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা সরকারের অন্য কোনো বিভাগ থেকে সাড়া না মেলার কারণে এ খাতের নেতারা কিছুটা চাপে পড়ে যান। এর মধ্যে বাস-মিনিবাস ধর্মঘট উঠে যাওয়ার পর তাঁদের ওপর আরও চাপ বাড়ে। এ ছাড়া সাধারণ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিকেরাও অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে অস্থির হয়ে পড়েন। কোথাও কোথাও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চালানো শুরু হয়। এ পরিস্থিতি ধর্মঘট চালিয়ে গেলে তা ভেঙে পড়তে পারে, এ আশঙ্কায় সরকারের সঙ্গে একটা বৈঠকের চেষ্টা চালান নেতারা। অন্যদিকে ধর্মঘটে নিত্যপণ্যের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, এ দুশ্চিন্তা আছে সরকারের। এ জন্য শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পণ্য পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।