কোরবানির ঈদের পর দ্বিতীয়বারের মতো আরেক দফা বেড়েছে মুরগির দাম। এক সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগির কেজিপ্রতি যে দাম ছিল, গতকাল বৃহস্পতিবার ওই দাম থেকে অন্তত ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। আর সোনালিকা মুরগিও কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হয়।
গতকাল রাজধানীর মিরপুর-১–এর শাহ আলী মার্কেট কাঁচা বাজার, মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচা বাজার ও কারওয়ান বাজারের খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা ও সোনালিকা (কক) মুরগি গতকাল ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ ও কোরবানির ঈদের কারণে মাঝে দুই সপ্তাহ বাজারে মুরগির চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এতে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহেও ব্রয়লার মুরগির কেজিপ্রতি দাম ছিল ১২৫-১৩০ টাকা। তখন সোনালিকা মুরগি প্রতি কেজি ২১০ থেকে ২১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
তবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এক দফা বাড়ে মুরগির দাম। তখন ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৩০-১৩৫ টাকা ও সোনালিকা মুরগি প্রতি কেজি ২৩০ থেকে ২৩৫ টাকায় বিক্রি করা হয়।
মিরপুর ৬ নম্বরের মুরগি বিক্রেতা সালাউদ্দিন খান বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ শেষের পর অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁ খুলেছে। ঈদে বাড়ি যাওয়া অনেকেই ঢাকায় ফিরেছেন। সব মিলিয়ে চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে। চাহিদা বৃদ্ধির কারণেই দামও বেড়ে গেছে।
এ ছাড়া হঠাৎ কাঁচা মরিচের দামও প্রায় আড়াই গুণ বেড়ে গেছে। ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে গতকাল ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। গতকাল মিরপুর-১ শাহ আলী কাঁচা বাজারে ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। এই হিসাবে এক কেজির দাম আসে ২৬০ টাকা। তবে একসঙ্গে এক কেজি পরিমাণ কাঁচা মরিচ কিনলে ২৫০ টাকায় বিক্রি করেন দোকানি নিলয় হোসেন।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, বুধবারে পাইকারিতে এক পাল্লা (৫ কেজি) কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আজ (বৃহস্পতিবার) সেই মরিচ ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, বাজারে এখন দেশি কাঁচা মরিচ নেই। বৃষ্টির কারণে বাজারের এই অবস্থা। বাজারে যে মরিচ আছে সেগুলো ভারতীয় এলসি জাতের।
বাজারে মুরগি ও কাঁচা মরিচের দাম বাড়লেও নতুন করে চালের দাম আর বাড়েনি। গতকাল মিরপুর ১ ও কারওয়ান বাজারের খুচরা বাজারে মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৬-৪৮ টাকায় বিক্রি করা হয়। আর মাঝারি মানের বিআর-২৮ চাল প্রতি কেজি ৫০-৫২ টাকা, সরু জাতের মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৬২-৬৪ টাকা এবং নাজিরশাইল চাল প্রতি কেজি ৬৭-৭০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
বাজারে সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল মিরপুর ও কারওয়ান বাজারে ঢ্যাঁড়স প্রতি কেজি ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, পটোল ৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। সবজির মধ্যে বাজারে শুধু করলা ও বেগুনের দাম একটু বেশি। করলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা এবং বেগুন প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাজারে আমদানি করা চায়না আদা ও রসুনের দাম কমেছে। কেজিতে অন্তত ৫০ টাকা কমে আদা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। রসুনের কেজিপ্রতি দামও ১৩০ টাকা। গত মাসের শেষে এই রসুনের দাম ছিল ১৬০ টাকা কেজি। এ ছাড়া বাজারে দেশি রসুন ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
গতকাল মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচা বাজারে সবজি ও মুরগি কিনতে আসেন পল্লবীর বাসিন্দা আনোয়ার কবির। তিনি লেপ-তোশকের দোকানে কারিগরের কাজ করেন। আনোয়ার বলেন, আগে মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা রোজগার করতেন। এখন তিন হাজারও রোজগার হয় না। সয়াবিন তেল, চাল ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে অনেক কষ্টে আছেন বলে জানান তিনি।