সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান মারা গেছেন আজ সোমবার (২৫ ডিসেম্বর ২০২৩)। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অনেক অর্জনের মধ্যে একটি দেশীয় উদ্যোক্তা–শ্রেণি গড়ে ওঠা। এই উদ্যোক্তাদের কারও কারও পারিবারিক ব্যবসার ঐতিহ্য ছিল। কারও কারও ব্যবসা শুরুর মতো মূলধন ছিল। বিপরীতে কারও কারও অর্থকড়ি, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা—কিছুই ছিল না। দেশের যেসব উদ্যোক্তা সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা, উদ্যোগ ও মানুষের কাছ থেকে শিখে শূন্য থেকে বড় শিল্পোদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন, দেশের শিল্পায়নের ভিত তৈরি করেছেন, মানুষের কাজের ব্যবস্থা করেছেন, তাঁদের একজন সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান। কিশোর বয়সে বাড়ির আঙিনায় মাত্র ৪২ টাকা পুঁজিতে একটি মুদিদোকান খুলে তাঁর ব্যবসাজীবন শুরু। আজকে তাঁর হাতে গড়া সিটি গ্রুপে কাজ করেন ১৫ হাজার মানুষ। কেনাবেচা দাঁড়িয়েছে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকায়। ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবরের সন্ধ্যায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন প্রথম আলোর ডেপুটি হেড অব রিপোর্টিং রাজীব আহমেদ। সেই আলাপচারিতায় উঠে এসেছিল এই শিল্পোদ্যোক্তার শৈশব, পরিবার, ব্যবসাজীবন ও পুরান ঢাকার কথা। বলেছিলেন, কী তাঁকে ব্যবসায় টেনে এনেছে, সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পরও কীভাবে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, মানুষের কাছ থেকে কীভাবে শিখেছেন—এসব বিষয়ে। ফজলুর রহমান স্মরণে সেই সাক্ষাৎকার আবার পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।
মতিউর রহমান: আপনার হাতে গড়া সিটি গ্রুপ ও ব্র্যান্ড তীর দেশে সুপরিচিত। আপনি কী বলবেন, সিটি গ্রুপের ব্যবসা আসলে কতটা বড়?
ফজলুর রহমান: সত্যি বলতে কি, এগুলো নিয়ে চিন্তা করি না। অল্প কিছু মিলকারখানা আছে। ১৫ হাজার লোক কাজ করেন। তাঁদের সঙ্গে বছরে একবার সবাই মিলে ডাল-ভাত খাই, এটাই বড় পাওয়া।
মতিউর রহমান: আমরা জানি, আপনার কিছুই ছিল না। আপনি পারিবারিক সংকটের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষারও সুযোগ পাননি। কীভাবে শুরু করলেন?
ফজলুর রহমান: আমি গরিবের সন্তান। আমরা ১১ ভাই-বোন। তাদের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। আমার শৈশবেই বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে আমাদের বড় দুই ভাইকে পরিবারের হাল ধরতে হয়। সেটা ১৯৫৭-৫৮ সালের কথা, আমরা গেন্ডারিয়ার (এখনকার পুরান ঢাকায়) আমাদের বসতবাড়ির আঙিনায় একটি মুদিদোকান দিলাম। পুঁজি ছিল ৪২ টাকা। বাবা দিয়েছিলেন। সেটা মূলত ছিল টংদোকান।
মতিউর রহমান: মুদিদোকানে বিক্রি কত হতো, লাভ কী রকম ছিল?
ফজলুর রহমান: দিনে শ দেড়েক টাকার বেচাকেনা হতো। সেখান থেকে ২০-৩০ টাকা লাভ হতো। এই আয় ও কিছু কৃষিজমির ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে আমাদের সংসার কোনোরকমে চলত।
মতিউর রহমান: মুদিদোকান যখন দিলেন, তখন আপনার বয়স কত? সেই সময়কার কথা কতটুকু মনে আছে।
ফজলুর রহমান: আমার বয়স ১০-১১ বছর। মনে আছে, ডালপুরি, তেহারির মতো ভালো কিছু খেতে হলে আমাদের নানুর বাড়িতে যেতে হতো। তাঁদের অবস্থা ভালো ছিল। ঢাকাইয়া মানুষেরা তো দুই বেলাই বিরিয়ানি খায় (হাসি)।
মতিউর রহমান: আপনার ভাই-বোনেরা কি আপনার মুদিদোকান করার চেষ্টার সঙ্গে ছিল?
ফজলুর রহমান: তারা তো তখন কাজের উপযুক্ত নয়। আমি আর আমার বড় ভাই মিলে দোকান দিলাম। আমার বড় ভাই কমলাপুরে ফুফাতো ভাইয়ের দোকানে কাজ করত। সেখানে খাওয়াদাওয়ার বেশ অনিয়ম হতো। বাবা তাকে বাড়িতে চলে আসতে বলেন। আমরা দুই ভাই মিলে দোকান করলাম।
মতিউর রহমান: তাহলে কি আমরা বলতে পারি, আপনার ছোটবেলা থেকেই দোকান করা, ব্যবসা করা, নিজে কিছু করা—এসবের দিকে নজর ছিল?
ফজলুর রহমান: অবশ্যই। আমি একবার আমার এক চাচার কাছে গেলাম। তিনি তাঁর ব্যবসায় আমাকে যোগ দিতে বললেন। আমি চাচাকে বললাম, তিনি যদি আমাকে পড়াশোনা করতে বলতেন, সব খরচ দেবেন বলতেন, তাহলে আমি তাঁর কথা রাখতে পারতাম। তাঁর ব্যবসায় গিয়ে আমরা বড় হব, সেটা হয় না। কারণ, তাহলে আমার চাচাতো ভাইয়েরা আগের নজরে আমাকে দেখবে না।
মতিউর রহমান: তো আপনি ১৯৫৮ সাল থেকে মুদিদোকান দিয়ে বেচাকেনা শুরু করেন। তারপর কী হলো?
ফজলুর রহমান: তারপর ১৯৭২ সালে গেন্ডারিয়ায় শর্ষের মিল দিলাম। ৯ জোড়া ঘানি। নিজেদের কাছে হাজার পঞ্চাশেক টাকা ছিল। ১৯৭৩-৭৪ সালে ৫০ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছিলাম। এই ব্যবসায় ভালো করলাম। এরপর ১৯৮৫ সালে একটি রি-রোলিং মিল করি। ধাপে ধাপে আরও কারখানা হয়েছে।
মতিউর রহমান: আপনি শর্ষের তেলের মিল করার মাধ্যমে শিল্পের যাত্রা শুরু করলেন। এরপর এত বড় হলেন। এর মধ্যে আপনার পরিশ্রম, উদ্যোগের বাইরের কিছু কি ছিল?
ফজলুর রহমান: চেষ্টায় ত্রুটি না থাকলে সফল হতে কষ্ট হয় না। আমাদের পাড়ায় সবাই পয়সাওয়ালা ছিল। একসময় যেমন বংশাল ও পোস্তায় পয়সাওয়ালা মানুষের বাস ছিল, তেমনি গেন্ডারিয়ায়ও ধনী মানুষেরা থাকতেন। আমি যখন বিকেলে একটু সময় পেতাম, তখন ধূপখোলা মাঠে গিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে সময় কাটাতাম। তখন প্রত্যেকের বাড়িতে জায়গিরদার ছিল। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতাম। আমি তো পারি নাই, যাঁরা পড়াশোনা করতেন, তাঁদের কাছ থেকে কিছু জানার চেষ্টা করতাম। এক আনার বাদাম কিনলে এক ঘণ্টা আড্ডা দেওয়া যেত।
মতিউর রহমান: তাহলে আপনি তাঁদের কাছ থেকে কী শিখলেন, কী জানলেন?
ফজলুর রহমান: তাঁদের কেউ কেউ ব্যাংকার হয়েছেন। বলতেন ব্যাংকে হিসাব খুলতে। ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেখান থেকে টাকা জমানো শুরু করলাম। আরও নানা বিষয়ে তাঁদের কাছ থেকে জানতাম।
মতিউর রহমান: কারখানা করার সাহস কই পেলেন? টাকাপয়সা নিয়ে নামতে তো সাহস লাগে।
ফজলুর রহমান: আসলে সাহস ছিল না। তখন যাঁরা পাকিস্তানি ব্যবসায়ী ছিলেন, তাঁরা গদিতে সাদা চাদর বিছিয়ে বসতেন। কোলবালিশ থাকত, সিন্দুক থাকত, টেলিফোন থাকত। আমি ভাবতাম, ওঁরা যদি করাচি থেকে এসে পারেন, আমরা কেন পারব না। আমাদের তো খরচ কম—বাসি ভাত খেলেও চলে, গুলগুলা খেলেও চলে। ডাল-ভাত আর গরুর দুধ—এর বাইরে ভালো কিছু ঘরে রান্না হতো না। আগেই বলেছি, ভালো কিছু খেতে হলে নানুর বাড়িতে যেতাম।
মতিউর রহমান: এত কিছু করার পেছনে কী চিন্তা ছিল?
ফজলুর রহমান: আসলে আমার ব্যবসা খুব ছোট আকারে ছিল। ১৯৮৮ সালে আমার ব্যাংকে ঋণ ছিল সাত থেকে আট কোটি টাকা। আর নিজেদের কিছু পুঁজি ছিল। ওই বছর বন্যায় শর্ষের গুদামে পানি চলে এল। আমার ধারণা ছিল, নিচের কিছু বস্তার শর্ষে পচে গেলেও বাকিগুলো ভালো থাকবে। কিন্তু দেখা গেল, ওপরের বস্তাগুলোর শর্ষেও পচে গেছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পচা শর্ষের গন্ধে টেকা দায়। গুদাম পরিষ্কার করতে অনেক কষ্ট হয়েছে।
বন্যার শুরুর দিকে আমাদের কাছে থাকা হাজার পঞ্চাশেক টাকা স্থানীয় গরিব মানুষকে ভাগ করে দিয়ে দিলাম, যাতে তারা খেয়ে বাঁচতে পারে। বন্যার পরে আমাদের গুদাম খালি। আমরা আবার শর্ষে কিনলাম। ভাগ্য ভালো ছিল, ওই বছর শর্ষের খইলের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। করাচিতে পান রপ্তানি হতো। পানের বরজে খইল দিতে হয়। চালের চেয়ে খইলের দাম বেশি। আমরা খইল বিক্রি করে তেল ড্রামে রেখে দিতাম। পরে আবার শর্ষের তেলের ব্যাপক চাহিদা দেখা দিল। সব মিলিয়ে আমাদের দায় শোধ হলো। পুঁজিও উঠে এল। ব্যাংকঋণ শোধ করে দিলাম।
তখন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এম হায়াতুর রহমান। উনি আমাদের খুব মায়া করতেন। তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, বন্যা তো আবার আসতে পারে। তখন কী করব? আপনি আমাদের ঋণ দেন, একটা সয়াবিন তেল পরিশোধন কারখানা করি। ঋণ পেলাম। ১৯৯২ সালে চালু হলো সয়াবিন তেল পরিশোধন কারখানা।
মতিউর রহমান: পরিশোধন কারখানার পর কী করলেন?
ফজলুর রহমান: সেই নিয়েই আছি (হাসি)।
মতিউর রহমান: আমরা তো দেখছি, আপনি চা-বাগানও করেছেন।
ফজলুর রহমান: চা-বাগান কেনাবেচায় আমি ছিলাম জিম্মাদার। যাঁর কেনার কথা ছিল, তিনি বায়নার টাকা দেওয়ার পর বললেন, কিনবেন না। তখন বিক্রেতা এসে আমাকে ধরলেন। আমি বায়নার টাকা দিয়ে দিলাম। তিনি আমাকে চা-বাগান লিখে দিলেন। সেই সুবাদে শ্রীমঙ্গলে চা-বাগানের মালিক হলাম। এখন বাগান তিনটি—দুটি শ্রীমঙ্গলে, একটি চট্টগ্রামে।
মতিউর রহমান: এরপর তো অর্থনৈতিক অঞ্চল করলেন। একটা না, দুইটা।
ফজলুর রহমান: মিলকারখানা করতে আবদুর রাজ্জাক নামের এক ভদ্রলোক সহায়তা করেছেন। তিনি বিনিয়োগ বোর্ডে চাকরি করতেন। উনি চাইতেন, বাঙালিরা কারখানা করুক। উনি সব সময় বেশি জমি কিনতে বলতেন, যুক্তি-বুদ্ধি দিতেন। সব সময় বলতেন, মিল বড় করতে হবে, এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। ওনার পরামর্শে কেনা জমিতে ২০১৫ সালে আমি অর্থনৈতিক অঞ্চল করলাম। আবদুর রাজ্জাক আমার সঙ্গে ৩০ বছর ছিলেন। তবে তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চল দেখে যেতে পারেননি।
মতিউর রহমান: আগামী দিনগুলোতে কী করার চিন্তা?
ফজলুর রহমান: এখন তো শরীরটাই আসল। আমার ইচ্ছা ছিল, আমরা শিল্প করব। মুদিদোকানে বসে থেকে আমার দু-তিনটা বিষয় মাথায় এসেছিল। তার একটি কারখানা করা। আরেকটি ছিল হাসপাতাল করা, যাতে গেন্ডারিয়ার লোকজন চিকিৎসা নিতে পারে। পুরান ঢাকার অক্ষয় দাস লেনে আমি দেখতাম যানজটের কারণে অ্যাম্বুলেন্সগুলো হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়ার আগে রোগীরা মারা যাচ্ছে। সেই থেকে হাসপাতাল করার ইচ্ছাটি জাগে। বাবার নামে আসগর আলী হাসপাতাল করলাম। এখন মেডিকেল কলেজ করব। সম্প্রতি অনুমোদন পেয়েছি। একটি ওষুধ কারখানা ও নার্সিং ইনস্টিটিউট করার পরিকল্পনা আছে।
মতিউর রহমান: যারা এখন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চায়, তাদের উদ্দেশে আপনি কী কী পরামর্শ দেবেন?
ফজলুর রহমান: একজন মানুষ কী করতে চায়, সেটা হলো বড় কথা। কেউ চাকরি করতে চায়, কেউ চিকিৎসক হতে চায়, কেউ প্রকৌশলী হতে চায়, কেউ ব্যবসা করতে চায়—ইচ্ছার ওপরেই অনেকটা নির্ভর করে। চেষ্টা থাকতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আপনি হয়তো নয়ছয় করে কিছু করতে পারেন, তবে সেই সাফল্য সাময়িক।
মতিউর রহমান: আর সৎ থাকার প্রশ্ন, সৎ থাকার বিষয়ে কী বলবেন।
ফজলুর রহমান: মূলমন্ত্র সেটাই। সৎ না থাকলে ব্যাংক আপনাকে টাকা দেবে না। সরবরাহকারীরা আপনাকে পাঁচ টাকার পণ্য দেবে না। এটার বিকল্পও কিছু নেই।
মতিউর রহমান: আমি শুনেছি, আপনি বিয়ের দিনও দেরি করে বাসায় ফিরেছেন।
ফজলুর রহমান: মিল থেকে বেরিয়েছি সাড়ে পাঁচটার দিকে (হাসতে হাসতে)। রাতে বিয়ে। ভাড়া করা শেরওয়ানি নিলাম। এক লোকের গাড়ি দেওয়ার কথা ছিল। গাড়ি আসেনি। হেঁটেই গেলাম।
মতিউর রহমান: কনের বাড়ি কত দূর ছিল?
ফজলুর রহমান: কাছেই ছিল।
মতিউর রহমান: কাবিন কত টাকা ছিল?
ফজলুর রহমান: এক-দুই হাজার। পাঁচ হাজারও হইতে পারে। কোনো কিছু দেওয়ার শর্তও ছিল না।
মতিউর রহমান: সারা দিন কীভাবে কাটে।
ফজলুর রহমান: আগে অনেক কাজ করতাম। এখন পারি না। আগে এক বেলা কারখানায় থাকতাম। এক বেলা অফিসে। চা-বাগানে যেতাম। এখন যাই না।
মতিউর রহমান: বিদেশ যাওয়া পছন্দ করেন?
ফজলুর রহমান: করতাম; বিশেষ করে মিলকারখানা দেখতে যেতে। আমি যত কারখানা করছি, সে সম্পর্কে আগে অন্য দেশে দেখে ধারণা নিয়েছি।
মতিউর রহমান: বড় বড় শিল্পগ্রুপে এখন দ্বিতীয় প্রজন্ম দায়িত্ব নিচ্ছে। আপনার ছেলে মো. হাসান ও মেয়ে শম্পা রহমান আপনার সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দিয়েছে। দুই মেয়ে যুক্তরাজ্যে থাকে। আপনার কী মনে হয়, নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়ীরা কেমন করবে?
ফজলুর রহমান: বাংলাদেশের তৃতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তারা চোস্ত ব্যবসায়ী হবে। আমরা তো না বুঝে দৌড়েছি। তাদের কোনো ঘাটতি থাকবে না। ব্যবসায়িক আলোচনা ও চুক্তি করতে কারও সাহায্য-সহযোগিতা লাগবে না। আমরা তো সহযোগিতা ছাড়া করতে পারতাম না।
মতিউর রহমান: সব মিলিয়ে এখন আপনার কী মনে হয়, আপনার জীবন নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট?
ফজলুর রহমান: আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। দেশটা স্বাধীন হয়েছিল, তাই আমরা মিলের মালিক হতে পেরেছি। স্বাধীনতার আগে একবার আমি ব্যাংকের একটি ‘সলভেন্সি’ সার্টিফিকেট আনতে ফরাশগঞ্জে গিয়েছিলাম। তখন ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন একজন অবাঙালি। আমি তাঁর কক্ষে ঢুকব কি ঢুকব না—তিনবার চিন্তা করেছিলাম। এখন তো ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে যেতে পারি। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে সালাম বিনিময় করতে পারি।
মতিউর রহমান: আপনি হয়তো জানেন, আমরা ২২ বছর ধরে প্রথম আলো প্রকাশ করছি। নানা বাধাবিপত্তির মধ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
ফজলুর রহমান: (নিজের ডেস্ক থেকে প্রথম আলো বের করে) আমিও প্রথম আলো পড়ি।
ঢাকার গুলশানে ফজলুর রহমানের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম সন্ধ্যা সাতটার দিকে। বের হয়েছি রাত নয়টার পর। তিনি দীর্ঘ আলাপচারিতায় লবণ কারখানা, কাগজের মিলসহ আরও বিনিয়োগের কথা জানালেন। অ্যাপায়ন করলেন। পুরোটা সময় তাঁর নাকে অক্সিজেন সরবরাহের সরু পাইপ লাগানো ছিল। ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ার কারণে তাঁকে অক্সিজেন নিতে হয়।পুরোটা সময় দেখলাম, এত বড় ব্যবসায়ী হয়েও ফজলুর রহমান অসম্ভব বিনয়ী। তিনি যেন ৭৪ বছর বয়সী তরুণ, অসুস্থ শরীর নিয়েও উদ্যমের কোনো ঘাটতি নেই, যে উদ্যম তাঁকে একজন সাধারণ মুদিদোকানি থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তায় পরিণত করেছে।