ক্যানসার নিয়ে নতুন বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের নারীরা স্তন ক্যানসারে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আর পুরুষেরা আক্রান্ত হচ্ছে মুখের ক্যানসারে। তবে নারী ও পুরুষ বেশি মারা যাচ্ছে যকৃতের ক্যানসারে।
‘ক্যানসারের বৈশ্বিক বোঝা ২০১৩’ (দ্য গ্লোবাল বার্ডেন অব ক্যানসার ২০১৩) শীর্ষক গবেষণার ফলাফল আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের অনকোলজি জার্নালে ২৮ মে প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষকদের একটি কনসোর্টিয়াম এ গবেষণা করেছে।
এতে দেখা গেছে, ২৩ বছরে বাংলাদেশে মুখে ক্যানসারে আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ১৯৯০ সালে ছিল ৮ হাজার ৮০০ জন, ২০১৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার। একই সময়ে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা প্রায় চার গুণ বেড়েছে। ১৯৯০ সালে ছিল ৪ হাজার ৪০০ জন, আর ২০১৩ সালে ১৬ হাজার ৫০০।
গবেষণাকাজের সমন্বয় করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন। এতে ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ১৮৮টি দেশের ক্যানসার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি নারী ও পুরুষ মারা যাচ্ছে যকৃতের ক্যানসারে। ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে এ ধরনের ক্যানসারে মৃত্যু দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ১৯৯০ সালে যকৃতের ক্যানসারে ৫ হাজার ৮০০ জন পুরুষ মারা যায়। ২০১৩ সালে মৃত্যু ঘটে ১৩ হাজার ৩০০ জনের। অন্যদিকে একই সময়ে যকৃতের ক্যানসারে ৩ হাজার ৯০০ নারীর মৃত্যু ঘটে। ২০১৩ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ৭ হাজার।
নতুন এ তথ্য সম্পর্কে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করবে। আমাদের কোথায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, কোন ক্ষেত্রে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তুলতে হবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে এসব তথ্য কাজে লাগবে।’
যকৃতের ক্যানসারে মৃতের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ক্যানসার অনেক দেরিতে শনাক্ত করা হয়। যখন শনাক্ত হয়, তখন রোগীকে সুস্থ করে তোলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে ক্যানসারের প্রাদুর্ভাবের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে নতুন ক্যানসারের মধ্যে মুখের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী নানা ধরনের ক্যানসারের তালিকার শীর্ষে থাকা ১০ ধরনের ক্যানসারের মধ্যে মুখের ক্যানসার নেই।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে ১৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আর ওই বছর মারা যায় ৮ কোটি ২০ লাখ মানুষ। বর্তমান সময়ে সব ধরনের ক্যানসারের মধ্যে বিশ্বব্যাপী এককভাবে পুরুষের মূত্রতন্ত্রের ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। ২০১৩ সালে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ এই ক্যানাসারে আক্রান্ত হয়। আর এতে মারা যায় ২ লাখ ৯৩ হাজার পুরুষ। ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার সব সময় তালিকার শীর্ষে ছিল। ২০১৩ সালে ১ কোটি ৮০ লাখ নারী এতে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ৪ লাখ ৬৪ হাজার।
বাংলাদেশে কোন ধরনের ক্যানসারে ২০১৩ সালে কত মানুষ মারা গেছে, তার একটি তালিকা তৈরি করেছেন গবেষকেরা। তালিকার শীর্ষে আছে যকৃতের ক্যানসার, এতে ২০ হাজার ২৬৭ জন মারা যায় (নারী ও পুরুষ)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল যথাক্রমে ফুসফুস ও পাকস্থলীর ক্যানসার, এতে মারা যায় যথাক্রমে ১৪ হাজার ৮০৩ জন ও ১০ হাজার ৩৮৫ জন।
জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের মেডিকেল অনকোলজির অধ্যাপক পারভীন শাহিদা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ইনস্টিটিউটে নিবন্ধন হওয়া নারী রোগীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। আর পুরুষের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসার বেশি। তিনি বলেন, যদি ক্যানসার শুরুতে শনাক্ত করা যায় এবং দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায়, তবে রোগীকে সুস্থ করা যায়।