একদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা বলছে, দেশে চালের কোনো সংকট নেই; জুন পর্যন্ত চাহিদা মেটানোর পরেও দেশে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। অন্যদিকে সরকার নিজে চাল আমদানি শুরু করেছে, সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতকে সুযোগ দিতে আমদানি করভার কমিয়ে অর্ধেকের কম করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইফতেখার মাহমুদ।
সরকার থেকে বারবার বলা হয়েছে দেশে যথেষ্ট চাল আছে, তাহলে কেন আমদানি?
আব্দুর রাজ্জাক: আমাদের বোরো ধানের এবার খুব ভালো ফলন হয়েছে। কোনো বিপর্যয় ছাড়াই আমরা প্রায় দুই কোটি টন বোরো চাল ঘরে তুলতে পেরেছি। এতে মনে হয়েছিল এবার কোনো সংকট হবে না। কিন্তু আমনের সময় দফায় দফায় বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ধানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এটা তো বাস্তব, অস্বীকার করার উপায় নেই। ধান-চালের বাজারে দ্রুত দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে আমরা তা টের পাচ্ছি। ফলে, এ পরিস্থিতিতে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না।
তাহলে আমরা কি আবারও খাদ্যঘাটতি ও আমদানিনির্ভরতার দিকে যাচ্ছি?
আব্দুর রাজ্জাক: দেশে চালের বড় কোনো ঘাটতি আছে বলে আমি মনে করি না। সামান্য কিছু চাল আমদানি দরকার হচ্ছে। দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরিও করতে পারে। ফলে, সেটাও কেউ করছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে।
২০১৭ সালে হাওরে ফসল বিপর্যয়ের পরে একইভাবে চাল আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ছয় লাখ টন ঘাটতির জায়গায় দেশে প্রায় ৪০ লাখ টন চাল আমদানি হয়। এর পরের তিন বছর কৃষকদের দাম না পাওয়ার কষ্টে থাকতে হয়েছে।
আব্দুর রাজ্জাক: হ্যাঁ, সেই অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে এবার প্রধানমন্ত্রী চাল আমদানির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দিয়েছেন। আপাতত ছয় লাখ টন চাল আমদানি হবে। তিন লাখ টন সরকার ভারত থেকে আনছে। আর বাকি তিন লাখ টন বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আনা হবে। আগেরবারের মতো কেউ চাইলেই একসঙ্গে অনেক চাল আনতে পারবে না।
ভারত থেকে এর আগে সরকারি পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে চাল আনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আব্দুর রাজ্জাক: ভারত থেকে এর আগে সরকারি পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন সময়মতো পুরো চাল আসেনি। তবে এবার আশা করি, এ ধরনের পরিস্থিতি হবে না। আর ভারত থেকে চাল আমদানির কারণ হিসেবে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সেখানে দাম তুলনামূলকভাবে কম। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের তুলনায় ভারতের চালের দাম প্রতি টনে কমপক্ষে ১০০ ডলার করে কম পাওয়া যাচ্ছে। তাই সেখান থেকে চাল আনাকে সরকার সুবিধাজনক হবে বলে মনে করছে।
একবার বলা হয় দেশে এত বেশি চাল আছে যে আমরা রপ্তানি করতে পারব। সরকার একদফা রপ্তানির অনুমতিও দিয়ে রেখেছে। তখন ইফপ্রি থেকে বলা হয়েছিল বাংলাদেশ চাল রপ্তানির মতো অবস্থায় নেই। এবারও মে ও নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ থেকে বাংলাদেশ বিষয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলা হয়েছিল, এবার চালের ঘাটতি হবে, আমদানি করতে হবে। আবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে গত সপ্তাহে বলা হলো দেশে চালের ঘাটতি নেই, বরং ৩০ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যের সঙ্গে সরকারি সংস্থাগুলোর তথ্যের ব্যবধানের কারণ কী?
আব্দুর রাজ্জাক: হ্যাঁ, এটা ঠিক দেশে খাদ্যের উৎপাদন ও ভোগ নিয়ে তথ্যের মধ্যে যথেষ্ট ঘাটতি আছে। নয়তো বাজারে এভাবে ধান-চালের দাম বাড়ত না। চালকলের মালিকেরা বাধ্য না হলে এত দাম দিয়ে ধান কিনত না। তাই আমরা এবার সব সংস্থার তথ্যকে সমন্বয় করে একটি একক তথ্যভান্ডার তৈরিতে গুরুত্ব দেব।