দেশে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার

দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৪১ শতাংশের উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম। এরা খর্বকায়। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বলছে, দেশে বর্তমানে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার।

ইউনিসেফ গত মাসে শিশুপুষ্টি নিয়ে ‘ইমপ্রুভিং চাইল্ড নিউট্রিশন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হচ্ছে, ৮০ শতাংশ খর্বকায় শিশুর বসবাস ১৪টি দেশে। এই তালিকার ষষ্ঠ স্থানে বাংলাদেশ। তালিকার শীর্ষে ভারত।

ইউনিসেফের ঢাকা কার্যালয়ের পুষ্টিবিশেষজ্ঞ মো. মহসীন আলী প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে শিশুপুষ্টির সূচক হিসেবে খর্বাকৃতি (স্টান্টিং) গুরুত্ব পাচ্ছে। পুষ্টিবিদেরা তাই পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতিতে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা কমানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনের শুরুর দিকে বৃদ্ধি ও উন্নয়নের সময় শিশু যদি লাগাতারভাবে অপুষ্টির শিকার হয়, তাহলে শিশু খর্বাকৃতির হয়। বয়স বাড়লেও তার উচ্চতা তেমন বাড়ে না। শূন্য থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের এই হিসাবের মধ্যে নেওয়া হয়। খর্বাকৃতির শিশুর মৃত্যুঝুঁকি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা শিশুর চেয়ে চার গুণ বেশি। ইউনিসেফ বলছে, শিশুর খর্বকায় হয়ে যাওয়ার সঙ্গে তার মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশ না হওয়ার সম্পর্ক আছে। এর ফলে তার বোধশক্তির ঘাটতি থাকে, শিশু স্কুলে খারাপ করে এবং ভবিষ্যৎ জীবনে আয়-উপার্জন তার কম হয়। অন্যদিকে এসব শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুটিয়ে যাওয়ার এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। ব্রাজিল, গুয়েতেমালা, ভারত, ফিলিপাইন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শ্রেণীতে অকৃতকার্য হওয়ার পেছনে শিক্ষার্থীদের খর্বাকৃতির একটা ভূমিকা আছে। শিশু পুষ্টিবিদ এম কিউ কে তালুকদার বলেন, অনেক দিনের অপুষ্টির ফল হচ্ছে স্টান্টিং বা খর্বাকৃতি। বৃদ্ধির সময় অনেক শিশু পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টি পায় না। দীর্ঘদিন এটা চলতে থাকলে শিশুর বৃদ্ধি ঘটে না, শিশু খর্বাকৃতির হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ, ছয় থেকে ২৩ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাদ্য এবং ২৪ থেকে ৫৯ মাস পর্যন্ত যথাযথ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার শিশুর সঠিক বৃদ্ধির সহায়ক।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে ধীরগতিতে হলেও খর্বকায় শিশুর হার কমছে। দেশে ছেলেশিশুর ৪১ শতাংশ খর্বকায়, মেয়েশিশুর ক্ষেত্রে এই হার ৪২ শতাংশ। শহরে ১০০ শিশুর মধ্যে ৩৬ জন খর্বকায়, গ্রামে ৪৩ জন। অন্যদিকে সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশ পরিবারে ১০০ শিশু জন্মালে ৫৪ জন খর্বাকৃতির হয়। আর সবচেয়ে ধনী ২০ শতাংশ পরিবারে জন্মালে খর্বকায় হয় ২৬ শতাংশ শিশু।