দেশে করোনার নতুন ধরনের সঙ্গে সংক্রমণ বাড়ার সম্পর্ক রয়েছে

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

বিজ্ঞানী ও গবেষেকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের রুপান্তরের ওপর নজরদারি অব্যাহত রাখা জরুরি। এটা রোগ নিয়ন্ত্রণ ও টিকার ব্যাপারে নীতিগত সিন্ধান্ত গ্রহণে কাজে আসবে। দেশের বিজ্ঞানীদের এই বক্তব্য ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল (বিএমজে) গ্লোবাল হেলথ সাময়িকীর সম্পাদকীয় নিবন্ধে ছাপা হয়েছে।

নিবন্ধে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্যের ধরন (বি.১.১.৭) ও দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন (বি.১.৩৫১) শনাক্ত বিষয়ে তথ্য ছাপা হয়েছে। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এ বছর দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক ছিল।

দেশে জিন বিশ্লেষণ ও জিনের রূপান্তরের গুরুত্ব আছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা। তিনি বলেন, ‘ভারতের একটি নতুন ভেরিয়েন্টের (ধরন) কথা আমরা শুনছি। দেশের পরিস্থিতি জানতে হলে জিন বিশ্লেষণ অব্যাহত রাখা দরকার। তবে যে ভেরিয়েন্টই শনাক্ত হওয়াই যথেষ্ট নয়। সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে।’

সিএইচআরএফ দেশে করোনা ভাইরাসের রূপান্তর প্রথম শনাক্ত করে। তারা জিনের রূপান্তরের ওপর নজরদারি অন্যাহত রেখেছে। নিবন্ধে বলা হয়েছে, গত বছর ডিসেম্বরে তারা প্রথম যুক্তরাজ্যের ধরন (বি.১.১.৭) শনাক্ত করেছিলেন। জিন বিশ্লেষণে তারা এবছর জানুয়ারিতে ২১ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ১৬ শতাংশ এবং মার্চে ৮ শতাংশ যুক্তরাজ্যের ধরন দেখতে পেয়েছিলেন।

অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন (বি.১.৩৫১) তারা প্রথম শনাক্ত করেছিলেন ফেব্রুয়ারিতে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন (বি.১.৩৫১) শনাক্তের হার ছিল যথাক্রমে ৩৩ ও ৭৭ শতাংশ। অন্য বিজ্ঞানী ও গবেষকদের বিশ্লেষণের সঙ্গে সিএইচআরএফের বিশ্লেষণের মিল ছিল বলে নিবন্ধে বলা হয়েছে।

আগেই জানা গিয়েছিল যে, অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন (বি.১.৩৫১)–এর ক্ষেত্রে জোরালোভাবে কাজে লাগছে না। এই ধরনের তথ্য বাংলাদেশি গবেষকদের এই বিশ্লেষণেও আছে। গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক সমীর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা বি.১.৩৫১ ভেরিয়ন্টের ক্ষেত্রে পুরোপুরি সুরক্ষা না দিলেও টিকা নেওয়া প্রয়োজন। এই টিকা আইসিইউয়ের ওপর চাপ কমাবে, হাসপাতালে রোগীর ভিড় কমাবে।’

যত বেশি জিন বিশ্লেষণ করা যায় সংক্রমণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি বেড়ে যায়। তবে করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করার মতো পর্যাপ্ত জনবল ও গবেষণাগার দেশে নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিন রূপান্তরের তথ্য সংক্রমণ প্রতিরোধের কাজে ব্যবহৃত হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে রোগী ব্যবস্থপনার কাজেও লাগে। আবার টিকা উদ্ভাবন ও ব্যবহারের কাজেও ব্যবহার করা যায়।’