২০২০ সালে দেশে ১৩ হাজার ২৮ জনের স্তন ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে।
মারা গেছেন ৬ হাজার ৭৮৩ জন।
দেশে সব ধরনের ক্যানসারের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে স্তন ক্যানসার তৃতীয় অবস্থানে। নারীরাই বেশি এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন। গত বছর এই ক্যানসারে আক্রান্ত ১৩ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশে। মৃত্যুহারের দিক থেকে স্তন ক্যানসার চতুর্থ। অথচ যথাসময়ে শনাক্ত হলে ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিলে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে স্তন ক্যানসার শনাক্তে ৫০৩টি কেন্দ্র রয়েছে। তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে এই সেবা একেবারেই অপ্রতুল, ১ শতাংশের কম।
এই পরিস্থিতিতে আজ ১০ অক্টোবর পালিত হচ্ছে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘স্ক্রিনিং জীবন বাঁচায়’।
দেশে স্তন ক্যানসার শনাক্তে ৫০৩টি কেন্দ্র রয়েছে। তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে এই সেবা ১ শতাংশের কম।
বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, লক্ষণ দেখা না দিলেও ঝুঁকি বেশি, এমন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সহজ কোনো পদ্ধতিতে রোগী শনাক্ত করার কৌশলের নাম ক্যানসার স্ক্রিনিং। স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের প্রধান তিনটি পদ্ধতি হচ্ছে, ম্যামোগ্রাম বা বিশেষ ধরনের এক্স-রের সাহায্যে স্তনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন শনাক্ত করা, ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন (সিবিই) বা চিকিৎসক দিয়ে স্তন পরীক্ষা এবং ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন (বিএসই) বা নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা করা।
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, যেসব মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করান না, কম বয়সে বিয়ে ও সন্তান ধারণ করলে, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে, অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান ও তামাক গ্রহণ করলে এবং যাঁদের পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। এসব ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা না দিলেও নিয়মিত স্ক্রিনিং করা উচিত। তিনি বলেন, স্তনে চাকা, স্তনের বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া, চামড়া কুঁচকে যাওয়া, স্তনের বোঁটা দিয়ে রক্তঝরা স্তন ক্যানসারের লক্ষণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার গবেষণাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইএআরসির ক্যানসারবিষয়ক বৈশ্বিক অনলাইন ডেটাবেইস গ্লোবোক্যানের হালনাগাদ করা তথ্য বলছে, ২০২০ সালে দেশে ১৩ হাজার ২৮ জনের স্তন ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। রোগীদের সবাই নারী। দেশে ওই বছর এই ক্যানসারে আক্রান্ত ৬ হাজার ৭৮৩ জন মারা গেছেন।
তবে সচেতন হলে স্তন ক্যানসার দ্রুত শনাক্ত ও পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী এবং জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যানসার রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম ধাপে ক্যানসার শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরু হলে এবং পরিপূর্ণ চিকিৎসা নিলে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সুযোগ বেড়ে যায়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সারা দেশে ইলেকট্রিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। এই কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও কিছু বেসরকারি সংস্থায় ৫০৩টি সেন্টারের মাধ্যমে দেশে ক্যানসার স্ক্রিনিং সেবা দেওয়া হয়। উপজেলা পর্যায়ে ৭২ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং সেবাকেন্দ্র থাকলেও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে তা ১ শতাংশের কম। ৩ হাজার ৭২৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৩০টিতে স্ক্রিনিং কেন্দ্র আছে। এদিকে দেশের স্ক্রিনিং কেন্দ্রগুলোয় স্তন ক্যানসার শনাক্তে ম্যামোগ্রাফি থাকলেও, নেই উন্নতমানের আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যবস্থা।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ক্যানসার স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা ব্যাহত হয়েছে। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৬৭০ জন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নারী ১ হাজার ৬৫১ জন, পুরুষ ১৯ জন। ২০২০ সালে চিকিৎসা নেওয়ার সংখ্যা কমে ১ হাজার ৫০১ হয়। তাঁদের মধ্যে নারী ১ হাজার ৪৮০ জন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং স্ক্রিনিং কর্মসূচির পরিচালক আশরাফুন্নেসা প্রথম আলোকে বলেন, স্ক্রিনিং সেবা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্যানসার প্রতিরোধ এবং ক্যানসার শনাক্তের মাধ্যমে প্রথম ধাপে চিকিৎসা শুরু করে রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য স্ক্রিনিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।