প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বহু ষড়যন্ত্রের পরও পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। যারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং দেশকে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, এভাবেই তাদের যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।
ইউএনবি জানায়, দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন করতে গিয়ে আজ রোববার মুন্সিগঞ্জের মাওয়া টোলপ্লাজা–সংলগ্ন গোলচত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাসসের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে দেশের রেল খাতের নতুন দিকের উন্মোচনে ‘পদ্মা সেতু রেলসংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের’ উদ্বোধন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী সেতুর মাওয়া প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ‘পদ্মা সেতু রেলসংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের’ আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগের এই নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক রেলসংযোগ প্রকল্পের মডেল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সাংসদ, সেনাবাহিনী প্রধান, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দেশের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নয়নের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে শহীদ লোকজনের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু দিয়ে জাজিরা ও শিবচর হয়ে মাওয়া ও ভাঙার মধ্যে রেলসংযোগ স্থাপিত হবে। এর মাধ্যমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোরের মধ্যে রেলসংযোগ স্থাপিত হবে।
চীন সরকার মনোনীত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিডেট চীন জিটুজি ব্যবস্থায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ খাতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৬৭ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২৩ কিলোমিটার এলিভেটেড রেলপথ নির্মিত হবে। এতে একাধিক এলিভেটরসহ দুটি প্লাটফর্ম, একটি মেইন লাইন ও দুটি লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বুয়েট) এই প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে বেলা ১১টার দিকে মাওয়ায় পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে পদ্মা সেতুর নামফলক এবং মাওয়া অংশে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুর কাজের ৬০ শতাংশ অগ্রগতি উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি মাওয়া-কান্দিপাড়া-জসোলদিয়া এলাকায় ১ হাজার ৩০০ মিটার নদীতীর স্থায়ী সুরক্ষা কাজের উদ্বোধন করেন।
এই সেতু নির্মাণে অনুমিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা এবং এর মধ্যে এই পর্যন্ত ১২ হাজার ৯৭২ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, সেতুর নির্মাণকাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর সার্বিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশ এবং মূল সেতুর দৃশ্যমান অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। তাঁরা বলেন, সেতুর ৫ম স্প্যান স্থাপন করায় সেতুর মূল কাঠামোর ৭৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। সেতুটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপাদানে নির্মিত হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলেন, সেতুটি স্টিল এবং কনক্রিট কাঠামোয় তৈরি হচ্ছে এবং যানবাহন ওপরের ডেক দিয়ে এবং রেল নিচের ডেক দিয়ে চলাচল করবে।
সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে দক্ষিণাঞ্চলীয় ১৯ জেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী ঢাকা (যাত্রাবাড়ী)-মাওয়া এবং পাচ্চর-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এই প্রকল্প ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে অনুমোদন করা হয়।
৫১ কিলোমিটার হাইওয়ে আধুনিক যান চলাচলের ডিজাইনে ২ লেন থেকে ৪ লেনে উন্নীত করা হয়েছে এবং এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৮৫২ দশমিক ২৯ কোটি টাকা। এতে হাইওয়ের উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত পৃথক লেন এবং হাইওয়ের মাঝখানে ৫ মিটার প্রশস্ত সড়কদ্বীপ রয়েছে। এই সড়কদ্বীপ ব্যবহার করে মেট্রো রেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি ৫৪টি কালভার্ট, ২০টি আন্ডারপাস, ৪টি সেতু, ২৫টি ছোট সেতু, ৫টি উড়াল–সেতু, ২টি ক্রসিং, ৪টি রেলওয়ে আন্ডারপাস রয়েছে। এসব সুযোগ-সুবিধা যুক্ত হওয়ার পর এটি এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তরিত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী পরে মাওয়া টোলপ্লাজা–সংলগ্ন মাওয়া গোলচত্বরে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর জাজিরা অংশ পরিদর্শন এবং সেখানে প্রথমে সেতুর অগ্রগতির কাজের উদ্বোধন করার কথা ।