ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে দিনভর দেশের আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। বিশ্বজুড়ে আজ বুধবার সন্ধ্যায় চন্দ্রগ্রহণ ও ব্লাড মুন হওয়ার কথা ছিল। সেই মহাজাগতিক ঘটনা হয়েছে। তবে আকাশ মেঘলা থাকায় রাজধানী ঢাকা থেকে এই রক্তিম চাঁদের দেখা মেলেনি। তবে পাবনার রেলস্টেশন এলাকা থেকে রক্তিম চাঁদের দেখা মিলেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায়, একে বলে সুপার ব্লাড মুন।
আজ বুধবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে পাবনার রেলস্টেশন এলাকায় রক্তিম চাঁদের দেখা মেলে। প্রথম আলোর পাবনার আলোকচিত্রী হাসান মাহমুদ সন্ধ্যায় জানান, এর আগে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণও হয়েছিল। তবে আকাশে মেঘ থাকায় তা খালি চোখে দেখা যায়নি। চন্দ্রগ্রহণের পর চাঁদ লালচে রং ধারণ করে। খুব অল্প সময়ের জন্য রক্তিম চাঁদ পাবনার আকাশে উঁকি দিয়েছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পূর্ণ এই চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয় ঢাকার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪১ মিনিটে আর শেষ হয় ৭টা ৫১ মিনিটে। এই পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ এবং সুপারমুন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও পূর্ব এশিয়া থেকে পরিষ্কার দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালফি দ্বীপ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে এই চন্দ্রগ্রহণের গতিপথ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৯ মিনিটে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয় আরও ৯ মিনিট পর। এরপর পূর্ণ গ্রহণ থেকে চাঁদ বেরিয়ে আসে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টা ৫১ মিনিটের দিকে। চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর ছায়ায় চাঁদ ধীরে ধীরে ঢেকে যায়। এ সময় চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছে চলে আসে। এ সময় চাঁদকে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় ও উজ্জ্বল দেখায়।
করোনার কারণে এবার এই চন্দ্রগ্রহণ দেখার জন্য কোনো শিবিরের আয়োজন করা হয়নি। নিজ নিজ বাসার ছাদ থেকে চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করেন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সদস্যরা। সংগঠনটির চেয়ারম্যান মশহুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, এবারের সুপারমুন ও চন্দ্রগ্রহণ বাংলাদেশ থেকে দেখা যায়নি আকাশে মেঘ ছিল বলে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে আকাশ ঢেকে আছে মেঘে। তবে কয়েক জায়গা থেকে এটি দেখা গিয়েছে খুব কম সময়ের জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) বলছে, ২০২১ সালের অন্যান্য চন্দ্রগ্রহণের তুলনায় আজকের পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণটিতে পৃথিবীর খুব কাছাকাছি অবস্থানে আসে চাঁদ। এটাকেই সাধারণত সুপারমুন বলা হয়ে থাকে। এ সময় চাঁদের উজ্জ্বলতা ও আকার কেবল বাড়েই না, পাশাপাশি এই সুপারমুন একটা ‘সুপারপাওয়ার’ নিয়ে আসবে যেখানে চাঁদের রং পরিবর্তন হয়ে লালচে দেখায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম দস্তগীর আল-কাদেরী প্রথম আলোকে বলেন, সুপারমুনের সময় চাঁদকে অনেক বড় আকারের দেখাবে। এ সময় আলোর বিচ্ছুরণ বেশি হবে। লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি, তাই লাল রংটাই চোখে পড়বে মানুষের। অন্য রঙের আলোগুলো ছড়িয়ে পড়বে। তিনি বলেন, মানব সভ্যতার শুরু থেকে চন্দ্রগ্রহণ চমকপ্রদ এক ঘটনা। তবে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি সাধারণ একটি ঘটনা। প্রাচীনকালে অবশ্য অনেকের কাছে এটি ভীতিকর ব্যাপার ছিল। তবে বিজ্ঞানমনস্ক ও আধুনিক মানুষ কৌতূহল নিয়ে এটি উপভোগ করে। এখানে অলৌকিকতা নেই।