দেশকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে পেরেছি, মাদক নির্মূলেও সফল হব বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাটের শেখ হেলাল উদ্দীন স্টেডিয়ামে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার এক বছর পূর্তিতে র্যাব আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘বর্তমান সরকার জঙ্গি ও সন্ত্রাসকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের লালন-পালন করে না। তাই আমরা দেশকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে পেরেছি। দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতিতে আছেন। মাদক নির্মূলে নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে, আমরা তাতেও সফল হব।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অপার সম্ভাবনাময় সুন্দরবনে দস্যুরা পর্যটকদের জন্য যেমন ভয়ংকর ছিল, তেমনি সাগর ও বনে যারা জীবিকা নির্বাহ করত, তাদের কাছেও ছিল ভয়ংকর। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সেই সুন্দরবন আজ জলদস্যু ও বনদস্যু মুক্ত হয়েছে। শুধু দস্যুমুক্তই নয়, এখন ব্যবসায়ী ও জেলেরা কোনো ভয়ভীতি ছাড়াই সুন্দরবনে যাচ্ছেন।
সরকার সুন্দরবনে দস্যু দমনে সফল হয়েছে উল্লেখ আসাদুজ্জামান খান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সাংসদেরা আগে অভিযোগ করতেন তাঁদের এলাকার জেলেদের দস্যুরা ধরে নিয়ে গেছে, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন দস্যুতা নেই। হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবনে নিরাপদে ঘুরতে পারছেন। কিন্তু সুন্দরবনকে যারা আবার অশান্ত করার জন্য উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা দস্যুদের পুনর্বাসনে সরকার সহযোগিতা করছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, সুন্দরবনে দস্যুবৃত্তি ছেড়ে যেসব দস্যুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন, তাঁদের যাঁরা উসকানি দেন, তাঁদের শুধরাতে হবে। তা না হলে আপনাদের পরিণতিও হবে ভয়াবহ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামছুল হক, সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন ও র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে অবদান রাখার জন্য অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ও র্যাব কর্মকর্তাদের সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
২০১৬ সালের ৩১ মে সুন্দরবনের কুখ্যাত জলদস্যু মাস্টার বাহিনীর প্রধানসহ ১০ দস্যুর আত্মমর্পণের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রক্রিয়া। আত্মসমর্পণ করা মাস্টার বাহিনীর প্রধান মো. মোস্তফা শেখ বলেন, ‘তিন বছরের অধিক সময় হলো সুন্দরবনের দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছি। দস্যুতার জীবন ছিল অন্ধকারের। অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে এখন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ভালো আছি, ব্যবসা করছি। সুন্দরবনে এখন চাঁদাবাজি, অপহরণ নেই। জেলে বাওয়ালিরা নির্ভয়ে মাছ শিকার করছেন। বলতে পারেন, সুন্দরবনে ৯৯ ভাগ দস্যুমুক্ত।’
মোস্তফা শেখ আরও বলেন, ‘আমি ছেলেবেলায় অন্য দশজনের মতো ভালো থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় এক প্রভাবশালীর চাপে পড়ে সুন্দরবনে দস্যুবৃত্তিতে জড়িয়ে ছিলাম। আমরা যারা এই অন্ধকার পথে জড়িয়ে ছিলাম, তাদের সবার গল্প আমারই মতো। সুন্দরবনের দস্যুবৃত্তিতে যে প্রভাবশালীরা সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
অন্য জেলেরা বলেন, আমরা এখন নিরাপদে সাগরে মাছ শিকার করি। এখন আর কাউকে চাঁদা দিতে হয় না। এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে, সে জন্য সরকারকে নজরদারি করতে হবে।
২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবন ও সাগরে দস্যুবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়া অন্তত ৩২টি বাহিনী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে। বাহিনীগুলোর মোট ৩২৮ জন সদস্য ৪১২টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র এবং ১৭ হাজার গোলাবারুদ জমা দেন।
আত্মসমর্পণ করা দস্যু দলগুলো হলো মাস্টার বাহিনী, ইলিয়াস বাহিনী, মোতালেব বাহিনী, মজনু বাহিনী, খোকাবাবু বাহিনী, জনাব বাহিনী, আলিফ বাহিনী, আলম বাহিনী, দাদাভাই বাহিনী, ছোট ভাই বাহিনী, আল আমিন বাহিনী, মজিদ বাহিনী, সাহেব আলী বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, নোয়া বাহিনী, ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনী, ছোট রাজু বাহিনী, শান্ত বাহিনী, সুমন বাহিনী, ছোট সুমন বাহিনী, সাত্তার বাহিনী, জুলফু বাহিনী, শীষ্য বাহিনী, কাশেম বাহিনী, গামা বাহিনী, সাগর বাহিনী, মুকুল-সিদ্দিক বাহিনী, বড় ভাই বাহিনী, ভাই ভাই বাহিনী, শামসু বাহিনী, মোস্তাক বাহিনী, মানজু বাহিনী ইত্যাদি।