>
- ২০০৮ ও ২০১৪ সালেও দুর্নীতি প্রতিরোধের অঙ্গীকার ছিল
- গত ১০ বছরে দুর্নীতি কমেনি, বরং বিস্তার ঘটেছে ব্যাপক
- দেশে দুর্নীতি বিস্তারের একটি চক্র তৈরি হয়েছে
- দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে আ.লীগ
- অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ
- দুর্নীতি প্রতিরোধে টিআই বিশ্বব্যাপী চারটি সুপারিশ দিয়েছে
টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের সময় আবারও দুর্নীতি দমনের বিশেষ অঙ্গীকার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। দলটির নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ অর্থাৎ শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি আছে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘হয় নিজে নিজে শুধরাতে হবে, নইলে কঠোর ব্যবস্থা।’ প্রধানমন্ত্রী আরও নানা উপলক্ষে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা বলেছেন। একই ধারায় বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন তাঁর সরকারের একাধিক কর্তাব্যক্তি।
তবে দুর্নীতি নজরদারির প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা বলছেন, এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পদক্ষেপগুলো বিশদ পরিকল্পনা করে এর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা। কারা কীভাবে দুর্নীতি কমাবে, সেটা ঠিক করতে হবে। দুর্নীতি কমার নজির দৃশ্যমান করতে হবে।
২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারেও আওয়ামী লীগ দুর্নীতি প্রতিরোধের জোরালো অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু গত ১০ বছরে দেশে দুর্নীতি কমেনি, বরং তার বিস্তার ঘটেছে ব্যাপক।
এ সময়ে সব ধরনের সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে বহুগুণ। তারপরেও দুর্নীতি কমেনি। এই সরকারি কর্মকর্তারাই নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগকে সব ধরনের সমর্থন দিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। মূলত, সরকারের সঙ্গে সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের স্বার্থের সংযোগ, রাজনৈতিক নিয়োগ ও পদোন্নতি, স্বজনতোষী পুঁজিবাদের বিস্তার, সরকারঘনিষ্ঠদের কাজ পাওয়া—এভাবেই দেশে দুর্নীতি বিস্তারের একটি চক্র তৈরি হয়েছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উচ্চ আয়ের দেশ হতে চাইছে। কিন্তু দুর্নীতি না কমলে সব অর্জনই নষ্ট হয়ে যাবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ যে খুব কঠিন কাজ, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই এ কাজের জন্য দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশল প্রণয়ন করা দরকার। সেখানে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখতে হবে।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, মন্ত্রীদের কাজকর্ম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তা কার্যকরভাবে হতে হবে। সরকারি দলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চর্চায় পরিবর্তন আনতে হবে। গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের সহায়ক ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো কতটা কার্যকরভাবে করা হয়, তার ওপর নির্ভর করবে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের সাফল্য।
তবে ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, নির্বাচনী ইশতেহার এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটেছে। পাশাপাশি, সমস্যাটি যে সমাজে খুব প্রকটভাবে বিরাজ করছে, তারও স্বীকৃতি মিলেছে।
বাস্তবতা অবশ্য খানিকটা ভিন্ন কথা বলে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’–এর বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যেই দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতি ধারণা সূচক-২০১৮-তে চার ধাপ পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আর এ তথ্য প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এই রিপোর্টকে একপেশে, মনগড়া, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ছিলেন আরও কঠোর। তিনি বললেন, ‘রিপোর্ট দেওয়ার নামে সুইপিং কমেন্টস (ঢালাও মন্তব্য) করলেই হবে না। ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগারসহ (তথ্য-উপাত্ত) পরামর্শও দিতে হবে।’ দুর্নীতির অভিযোগকে সরকারিভাবে অস্বীকার করার এই প্রবণতা নতুন না হলেও এ থেকে বের হওয়াটাও নতুন একটি চ্যালেঞ্জ।
দুর্নীতির চিত্র
ঘুষ-দুর্নীতি ছাড়া সরকারি দপ্তরে কোনো কাজ হতে পারে, এ কথা এখন বিশ্বাস করার মতো লোক খুব কম আছে। এতে বাড়ছে ব্যবসা পরিচালনার খরচ। সরকারের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ব্যয় যাচ্ছে বেড়ে। যদিও দুর্নীতি কমালে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আরও দুই থেকে তিন শতাংশ পর্যন্ত বাড়ত বলে বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন বহু বছর ধরে।
বাংলাদেশে দুর্নীতির কত ক্ষতি এবং কোথায় কত দুর্নীতি হয়, এ নিয়ে বড় কোনো গবেষণা নেই। এ ক্ষেত্রে বড় ভরসা টিআইবি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে করা টিআইবির জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। এরপরের খাতগুলো হচ্ছে যথাক্রমে পাসপোর্ট, বিআরটিএ, বিচারিক সেবা, ভূমি সেবা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল ২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখিয়েছিলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির বিবর্তনের কয়েকটি ধাপ আছে। যেমন ১৯৭৩ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সময়টি মাঝারি ধরনের দুর্নীতি বিস্তারের দশক। ১৯৮৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময় ছিল উচ্চ দুর্নীতির দুই দশক। আর এরপর থেকেই দুর্নীতি চলে গেছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
আর বর্তমান সময়কার দুর্নীতির একটি চিত্র পাওয়া যায় ২০১৮ সালে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের (ওডিআই) করা ‘বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, দুর্নীতি ও প্রতিরোধ’ নিয়ে একটি গবেষণায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে এখন দুর্নীতির ধরন পাল্টে গেছে। দুর্নীতি এখন খানিকটা অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং দিনে দিনে তা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। দেশে একটি দায়মুক্তির সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। সেখানে এখন দুর্নীতিকে সেবা পাওয়ার খরচ হিসেবে মেনে নেওয়া হচ্ছে। দুঃখজনক হচ্ছে, দুই পক্ষই এখন বিষয়টি মেনে নিয়েছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত একাধিকবার বলেছেন, সেবার পাওয়ার খরচকে তিনি ‘স্পিড মানি’ হিসেবে দেখেন। তবে সিডিপি ও ওডিআই এবং টিআইবির গবেষণা বলছে, দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যাদের আয় অত্যন্ত স্বল্প। আর দুর্নীতি সমাজে আয় ও সম্পদে বৈষম্য বাড়ায়।
দুর্নীতি বনাম গণতন্ত্র
গত ২৯ জানুয়ারি বার্লিনভিত্তিক টিআই বিশ্বব্যাপী যে দুর্নীতির ধারণা সূচক-২০১৮ প্রকাশ করেছে, তার মূল প্রতিপাদ্য ছিল দুর্নীতি কীভাবে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম হাউস প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, ২০১৮ সালে গণতন্ত্র সূচকে ১১৩টি দেশের অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এই রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে টিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব দেশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে, মূলত তারাই গণতন্ত্র নিয়ে সংকটে পড়েছে। দেখা গেছে, উচ্চ দুর্নীতির দেশগুলোর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক অধিকার ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। আবার সেসব দেশেই দুর্নীতির বিস্তার ঘটে, যেখানে গণতান্ত্রিক ভিত্তি দুর্বল।
সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্যাট্রিসিয়া মোনেইরা এ নিয়ে বলেছেন, ‘দুর্নীতি গণতন্ত্রকে দূরে সরিয়ে রেখে একটি দুষ্টচক্র তৈরি করে। যেমন দুর্নীতির ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়।
গণতন্ত্র সূচক নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) গত ৯ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে ‘গণতান্ত্রিক’, এমনকি ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক’ দেশের তালিকায়ও বাংলাদেশকে রাখা হয়নি। বরং বাংলাদেশ রয়েছে স্বৈরতান্ত্রিক ও ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক অবস্থার মাঝামাঝি ‘হাইব্রিড রেজিম’ (সংকর শাসনব্যবস্থা) তালিকায়।
সমাধানে ‘জিরো টলারেন্স’
‘জিরো টলারেন্স নীতি’ কথাটির উৎপত্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ১৯৭৩ সালে। এরপর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ এই নীতির কথা বলে আসছে। আর সম্প্রতি এই নীতিকে আবার আলোচনায় নিয়ে এসেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিবাসন ঠেকাতে নেওয়া ‘জিরো টলারেন্স অভিবাসী নীতি’র কারণে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।
গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনা হয়েছে প্রথম দিন থেকেই। উদ্বেগ আছে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা, গণতান্ত্রিক অধিকারের ঘাটতি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব নিয়ে। এ রকম এক সময়েই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’-এর অঙ্গীকারকে সামনে নিয়ে এসেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশে এর পরপরই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ নিজেই অভিযানে নেমে পড়েন। দুদকের অভিযানে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক পাওয়া যায়নি আর চট্টগ্রামে পাওয়া যায়নি প্রাথমিক শিক্ষকদের। দুই বছর আগে দুদক ব্যাংক খাতের অর্থ আত্মসাৎ ঠেকাতে ব্যাংকের মাঝারি সারির কর্মকর্তাদের আটক করে জেলে পাঠানোর কাজ শুরু করেছিল। এতে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমেনি, ব্যাংক খাতের অবস্থাও ভালো হয়নি।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের দুর্নীতিবিরোধী রাজনৈতিক অঙ্গীকার রয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার কথাও বলছে সরকার। এ কারণে তারাও দুদককে সহায়তা করছে। দুদকের সামনের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘অভিযান চলছে। পাশাপাশি এক বছর মেয়াদি একটি কৌশল শিগগিরই নেওয়া হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে তা নির্ধারণ করা হবে।’
অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাঝারি বা নিচের স্তরের দুর্নীতি ধরলেই দুর্নীতি কমবে না। ব্যবস্থা নিতে হবে ওপর থেকে। কেননা, অর্থনীতিবিদেরা মানেন যে ‘ট্রিকল ডাউন করাপশন’ বাংলাদেশে অনেক বেশি কার্যকর। অর্থাৎ দুর্নীতি ওপর থেকে শুরু হয়, তারই জের নিচ পর্যন্ত চুইয়ে পড়ে। ফলে ব্যবস্থা নিতে হবে ওপরেই।
হাইকোর্টও ৭ ফেব্রুয়ারি মন্তব্য করেছেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রাঘববোয়ালদের ছেড়ে দিয়ে শুধু দুর্বলদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদক। যেখানে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, সেখানে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকেরা স্কুলে যাচ্ছেন কি যাচ্ছেন না, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা।’
কী করতে হবে
দুর্নীতি প্রতিরোধে টিআই এবার বিশ্বব্যাপী চারটি সুপারিশ তৈরি করেছে। যেমন প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’–এর ব্যবস্থা করা, দুর্নীতি প্রতিরোধ-সংক্রান্ত আইন, অনুশীলন ও প্রয়োগের মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে আনা, সাধারণ মানুষ যাতে নির্ভয়ে কথা বলতে পারে, সে ব্যবস্থা করে সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা, যেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা ভয়ডর ছাড়াই দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করতে পারেন।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার সব মিলিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতি তো করেন রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হলে প্রথমেই দরকার শুদ্ধাচারের যথাযথ বাস্তবায়ন। এটা হলে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে। এ ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, আয়ের সঙ্গে সংগতিহীন অর্থ-সম্পদ যাদের পাওয়া যাবে, তাঁদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ যেন দলীয় বা রাজনৈতিক আনুকূল্য না পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। এই দুটি পদক্ষেপ নিলেই পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে। অন্যরা তখন দমে যাবে।
আগামী পর্ব: নারীর অগ্রযাত্রা