মুন্সিগঞ্জে ইউপি নির্বাচন

দুদিনে দুই মৃত্যু, ঘরে ঘরে আতঙ্ক

পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়ন। আজ দুপুরে খাসকান্দি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, দ্বন্দ্ব ও সহিংসতায় গত দুদিনে দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁদের হত্যা করেছেন। এ দুই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গোটা ইউনিয়নে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হামলা-মামলার ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন গ্রামের পুরুষেরা। আতঙ্কে দিন পার করছেন বাড়ির নারীরা।

চরকেওয়ার ইউপিতে এবারের নির্বাচনে বিএনপি-জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী নেই। লড়াইটা শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন ও বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামানের মধ্যে। নির্বাচনের শুরুর দিকে পরিবেশ কিছুটা শান্ত থাকলেও গত রোববার সহিংসতার ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও পাল্টাপাল্টি হামলা চলে। এসব ঘটনায় দুই পক্ষের শতাধিক কর্মী–সমর্থক আহত হন।

গত রোববার চরকেওয়ার ইউনিয়নের খাসকান্দি এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতার সময় আবদুল হক (৫০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামানের লোকজন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনার এক দিন না পেরুতেই গতকাল সকালে ওই ইউনিয়নের নলবুনিয়াকান্দি এলাকার আবদুস সাত্তার সরকার (৪৫) নামের এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

আবদুস সাত্তারের স্ত্রী–সন্তানেরা দাবি করেন, এবার নির্বাচনে আক্তারুজ্জামানকে সমর্থন করার কারণে সাত্তারকে নৌকার প্রার্থীর লোকজন হত্যা করেন। এ দুটি ঘটনার পরপরই ইউনিয়নজুড়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।

খাসকান্দি গ্রামের হেলেনা বেগম বলেন, কয়েক দিন ধরে গ্রামে নারকীয় ঘটনা ঘটে চলেছে। তাঁরা কারও পক্ষের নন। তারপরও তাঁদের ঘর ও আসবাব ভাঙা হয়েছে। সামর্থ্য থাকলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতেন বলে জানালেন ওই নারী।

শাহারা বানু (৭০) বললেন, ‘বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নাই। হামলা–মামলার ভয়ে ছেলেদের শহরে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

মজিবুর হাজী (৭০) নামের এক ব্যক্তি বলেন, এলাকার একটি ঘরেও পুরুষ নেই। সবাই জীবনের মায়ায় ঘরবাড়ি ফেলে পালিয়েছেন।

ইউনিয়নটির ছোটমোল্লাকান্দি গ্রামের কয়েকজন বলেন, প্রত্যেক প্রার্থী বলছেন, ‘তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভোটের পক্ষে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হবে। তাহলে এলাকায় হানাহানি–মারামারি করছে কারা? যারা করছে, তারা কাদের সমর্থক? যাদের জন্য এলাকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না! আমরা নিরাপদে বাড়িতে থাকতে চাই।’

আতঙ্কে বাড়িঘর তালাবদ্ধ করে চলে গেছেন স্থানীয়রা। আজ বুধবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের খাসকান্দি এলাকায়

গত রোববার সহিংসতার সময় নিহত হওয়া আবদুল হকের মা আয়শা খাতুন বলেন, ‘আমরা সবাই প্রতিবেশী। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। হানাহানি চাই না।’

নলবুনিয়াকান্দি এলাকায় নিহত আবদুস সাত্তার সরকারের মা শহর বানু বলেন, ‘সংঘর্ষে আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক চাই না। এলাকায় ঝগড়াঝাটি বন্ধ হোক।’

চরকেওয়ার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে ইউপি নির্বাচন হোক। মানুষ তাদের বাড়িতে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করুক। ভোটের দিন জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক। ভোটে যে রায় আসবে, আমি মাথা পেতে মেনে নেব।’

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন ভূঁইয়াও জানালেন তিনি শান্তির পক্ষে। আফসার উদ্দিন বলেন, ‘যে বা যারা এই ইউনিয়নেকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে, বিভিন্ন ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষে জড়াচ্ছে, পুলিশ যেন দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। আমি কোনো লাশের ওপর দিয়ে চেয়ারম্যান হতে চাই না।’

মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রথম আলোকে বলেন, মুন্সিগঞ্জের প্রত্যেকটি ইউনিয়নে শতভাগ নিরপেক্ষ ওশান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হবে। প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। যারা বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে এলাকার পরিবেশকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে, মানুষের মনে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা করছে, ইতিমধ্যে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।