দুই হাত জোড় করে মেয়রের অনুরোধ

গুলশানের এই নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। পরে মেয়র লাল ক্রস চিহ্ন দিয়ে দেন সেখানে।
ছবি: মোহাম্মদ মোস্তফা

গত বছরের জুলাই মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জরিপ চালিয়ে বলেছিল, রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানীতে মশার উৎপাত বেশি। এক বছর পর গিয়ে একই চিত্র দেখতে পেলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

আজ শনিবার দুপুরে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে চিরুনি অভিযানের উদ্বোধনের পর গুলশান–২ নম্বরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুটি নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শনে যান মন্ত্রী ও মেয়র। পরিদর্শনকালে তাঁরা দুটি ভবনে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন।

পরে মেয়র ও মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই দুটি ভবনের মধ্যে একটিকে দুই লাখ এবং আরেকটি ভবনের সাইট ইঞ্জিনিয়ারকে তিন মাসের বিনা শ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে একটি ভবন বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টিস এবং আরেকটি ভবন নির্মাণের কাজ করছে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড।

দুটি ভবন পরিদর্শন শেষে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, অভিজাত এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে করপোরেশনের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তাই তিনি নিজে মন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এসব ভবন পরিদর্শনে এসেছেন।

গুলশান–২ নম্বরে নির্মাণাধীন এই দুটি ভবনে এডিস মশার চাষ হচ্ছে উল্লেখ করে উত্তর সিটির মেয়র বলেন, এডিস মশার জন্ম নালা কিংবা খালে হয় না। অভিজাত এলাকায়ই এর বংশবিস্তার হচ্ছে। এ সময় তিনি দুই হাত জোড় করে ভবনমালিক ও নির্মাণপ্রতিষ্ঠানকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘অনুরোধ করছি, যাঁরা বিভিন্ন জায়গায় বাসাবাড়ি বানাচ্ছেন, তাঁরা মেহেরবানি করে আপনাদের বাসা দেখেন, একটু মনোযোগ দেন। বাড়ির মালিক যাঁরা আছেন, তাঁরা নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকৌশলীদের বলেন। নির্মাণশ্রমিকদের বলেন।’ সবাই সচেতন হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

এর আগে গুলশান–২ নম্বরে ৮৮ নম্বর রোডের ১ নম্বর ফ্ল্যাটে নির্মাণাধীন ভবনের ভেতর প্রবেশ করেন মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় ভবনের বেজমেন্টে জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা খুঁজে পান তাঁরা। এ সময় ভবনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মেয়র ও মন্ত্রীর কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। তখন মেয়র আতিকুল বলেন, ‘আপনারা মশার জন্ম দেবেন। ভবনে ঢুকতে দেবেন না। গালি খাব আমরা। এটা তো হতে পারে না। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন ক্ষমা চাইলে চলবে না।’ এ সময় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গালির চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, মানুষ মারা যাচ্ছে। আপনাদের আরও সচেতন হতে হবে।’ পরে সেখানে থাকা সংস্থার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পার্সিয়া সুলতানা ভবনমালিককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন।

এরপর ৮৬ নম্বর রোডের ৬ নম্বর প্লটে নির্মাণাধীন আরেকটি ভবনে প্রবেশ করেন মন্ত্রী ও মেয়র। সেখানে তাঁরা দেখতে পান, এডিসের লার্ভা তৈরির পরিবেশ আরও ভয়াবহ। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের সাইট ইঞ্জিনিয়ারকে তিন মাস বিনা শ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।

দ্বিতীয় দফায় ঢাকা উত্তর সিটির মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া রোধে এখন পর্যন্ত আট দফায় চিরুনি অভিযান চালানো হয়েছে। আজ শুরু হওয়া চিরুনি অভিযান চলতি মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান।