পদ্মা সেতুর প্রাক্-সম্ভাব্যতা যাচাই হয় দেশীয় অর্থায়নে। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীতেও একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ১৯৯৯ সালের মে মাসে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য প্রাক্-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা (প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি) শুরু হয়। বলা যায়, এটাই দালিলিকভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম সূত্রপাত। এ হিসাবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের যাত্রা প্রায় দুই যুগের।
জাপানের আন্তর্জাতিক সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ২০০৩ সালের মে থেকে তৎকালীন সরকারের সময়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শেষ হয়েছিল ২০০৫ সালে। পরের বছর ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশগত প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়। সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার সময় জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই সেতুর একটি প্রাথমিক নকশা তৈরি করে। তবে তারা জানিয়ে দেয় যে সেতু নির্মাণের আগে পূর্ণাঙ্গ নকশা প্রণয়ন করতে হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। এতে মোট ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। ২০০৫ সালের ১৯ অক্টোবর ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। তবে তখনকার সরকার ডিপিপি অনুমোদন করে যেতে পারেনি।
পদ্মা সেতুর বিশদ নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে ২০০৭ সালে দরপত্র আহ্বান করে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছর আগস্টে পদ্মা সেতু নির্মাণে একটি ডিপিপি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ডিপিপিতে ২০১৫ সালের মধ্যে সেতু নির্মাণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের কাজটি চূড়ান্ত করলেও নিয়োগ দিতে পারেনি।
প্রাক্-সম্ভাব্যতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই কেন করতে হয়, সেই কৌতূহল জাগতে পারে। বিষয়টি হলো, পদ্মা নদীতে সেতু কেন দরকার, নির্মাণে ব্যয় কত হতে পারে, কোন জায়গায় সেতু নির্মাণ করলে ব্যয় কম হবে, সেতু নির্মাণে বিনিয়োগ অর্থনৈতিকভাবে কতটা যৌক্তিক হবে, সমীক্ষায় এসব বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। এরপর সেতু নির্মাণের বিষয়ে প্রস্তাব দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
প্রাক্-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে আরপিটি-নেডকো-বিসিএল নামের যৌথ উদ্যোগের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ১৯৯৯ সালের মে থেকে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাজ করে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিষ্ঠানটি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং মাওয়া-জাজিরা—এ দুটি পথ দিয়ে সেতু নির্মাণের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে।
দেখা যায়, মাওয়া-জাজিরা এবং পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ—এই দুই পথেই মূল সেতুর দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৬ কিলোমিটারের কিছু বেশি। তবে মাওয়া প্রান্তে নদীর তীর স্থিতিশীল। এ কারণে নদীশাসনে ব্যয় কম পড়বে। তারা দেখায় যে পাটুরিয়ার তুলনায় মাওয়া দিয়ে সেতু নির্মাণ করা হলে যাতায়াত খরচ কমবে, পুনর্বাসনে ব্যয় কম হবে এবং নদীশাসন সহজ হবে। প্রক্ষেপণ অনুসারে, মাওয়া-জাজিরা দিয়ে সেতু নির্মিত হলে যানবাহন বেশি চলবে।