কেরানীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ভাইবোন নিহত

দুই মাসেও চালক ও তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার হয়নি

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই সন্তানের ব্যাগ নিয়ে স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন বাবা–মা। গতকাল কেরানীগঞ্জে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই সন্তানের ব্যাগ নিয়ে স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন বাবা–মা। গতকাল কেরানীগঞ্জে।

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর মোল্লারপুল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ভাইবোন নিহত হওয়ার প্রায় দুই মাসেও ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তদন্তের ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ ওই দুই শিশুর পরিবার। দুই সন্তানের ছেঁড়া স্কুলব্যাগ ও বই–খাতা স্মৃতি হিসেবে আগলে দিন কাটাচ্ছেন তাঁদের মা-বাবা।

নিহত আফিফা আক্তার আফরিন পঞ্চম শ্রেণিতে, আফসার আহমেদ তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে স্কুলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উৎসব ছিল। খেলা শেষে দুই সন্তান এবং বাবা তাদের নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। তাদের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন রাজেন্দ্রপুরের পুরাহাটি এলাকায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পথে রাজেন্দ্রপুর মোল্লারপুল এলাকায় একটি ট্রাক তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ভাইবোন নিহত হয়। বাবা গুরুতর আহত হন।

গতকাল রোববার দুপুরে নিহত ভাইবোনের বাসভবন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর পোড়াহাটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তাদের বাবা শামসুল হক, মা ‍পুতুল বেগম ছেলেমেয়ের স্মৃতিবিজড়িত ছেঁড়া স্কুলব্যাগ নিয়ে কান্না করছেন।

বাবা শামসুল আলম বলেন, ‘আত্মীয়স্বজনেরা এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আসামি ধরা পড়েছে কি না। তাঁদের কী উত্তর দেব? দুঃখে কিছু বলতে পারি না। পুলিশ আমার ছেলেমেয়ের হত্যা মামলার আসামি ট্রাকচালক নবীন ও তাঁর সহযোগীকে ১ মাস ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।’ পুলিশ আমাদের বলেছে, আসামিদের গ্রেপ্তারে কয়েকবার অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। অবিলম্বে ট্রাকের চালক ও তাঁর সহযোগীকে অতিসত্বর গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজেন্দ্রপুর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের এলাকার দুই শিশু একসঙ্গে ট্রাকের চাপায় নিহত হলো। কিন্তু আজ পর্যন্ত পুলিশ সেই ট্রাকচালক ও সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে পারল না। অথচ সপ্তাহখানেক আগে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আবরার বাসের চাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় সেই বাসচালককে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা না যেতেই গ্রেপ্তার করে।’

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, দুই শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ট্রাকচালক ও তাঁর সহযোগীকে গ্রেপ্তারে পুলিশ একাধিকবার তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু তাঁদের পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, ট্রাকের চালক ও সহযোগীকে ধরতে পুলিশ যথেষ্ট আন্তরিক। ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পুলিশ ঘাতক ট্রাকটি মালামালসহ জব্দ করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।