ডয়চে ভেলের ইউটিউব টক শো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’-এ এবারের অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বাংলাদেশ নিয়ে আল–জাজিরার আলোচিত তথ্যচিত্র, পলাতক অবস্থায় সেনাপ্রধানের ভাইদের দণ্ড মওকুফ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন ও আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময় গত শুক্রবার রাত ১০টায় এ টক শো প্রচার করা হয়। ৫৬ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের এ টক শোর একাংশ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেছে ডয়চে ভেলে বাংলা। প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো:
সম্প্রতি জানা যায়, পলাতক অবস্থাতেই আনিস আহমেদ ও হারিছ আহমেদকে একটি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ড ২০১৯ সালেই মওকুফ করে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই বছরের ২৯ মার্চ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেটির অনুলিপি আইনমন্ত্রীর একান্ত সচিবের কাছে পাঠানোর কথা উল্লেখ থাকলেও তিনি বলেন, ‘এই প্রজ্ঞাপন আমার একান্ত সচিবের কাছে আসে নাই। জানলে সে আমার কাছে প্লেস করত।’ তবে প্রজ্ঞাপনটি মিথ্যা নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁর মতামত চেয়েছিল বলে নিশ্চিত করেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো মন্ত্রণালয়ে যদি কোনো আইনি বিষয় থেকে থাকে, আইনের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন থাকে, তাহলে সেটা হয় সংসদীয় আইনবিষয়ক ডিভিশন অথবা আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য যায়। ‘আমি বলেছি, ৪০১ ধারায় এই সাজা (আনিস আহমেদ ও হারিছ আহমেদের যাবজ্জীবন) মওকুফ করা যায় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীয় বিবেচনায় এই সাজা মওকুফ করতে পারেন, এই কথা আমার মতামতে ছিল।’
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো নির্দেশ দিয়েছিলেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্দেশ ছিল না। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, নির্দেশ যেহেতু ছিল না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন ছিল না এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও আমার কাছে কোনো নির্দেশ আসে নাই।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জোর দিয়ে জানান, এ মত তিনি স্বাধীনভাবেই দিয়েছেন এবং আইনের মধ্যে থেকেই দিয়েছেন।
সেনাপ্রধানের ভাইদের নিয়ে আল–জাজিরায় তথ্যচিত্র প্রকাশের পর তাৎক্ষণিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) যে বিবৃতি দিয়েছিল, সেখানেও তাঁদের দণ্ড মওকুফের কথাটি উল্লেখ ছিল না। বিষয়টি কেন আইনমন্ত্রী সরকারের অন্য বিভাগগুলোকে জানাননি—এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমি জানতাম যে ৪০১ ধারায় তাদের সাজা মওকুফ করার জন্য একটা ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাকে পাঠিয়েছে। তাদের মা একটা অ্যাপ্লিকেশন করেছিল, সেটা আমার কাছে পাঠিয়েছে। তারা ফিউজিটিভ (পলাতক) ছিল কি ছিল না, এমন কথা আমি কোনো দিন বলিনি।’
আল–জাজিরার তথ্যচিত্রে উঠে আসা অভিযোগগুলোর বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখতে হবে, আপনারা যে প্রশ্নগুলো করেছেন সেগুলো সঠিক কি না। সঠিক হলে তার পরের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আর যদি সঠিক না হয়, তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এই দুইটার একটা করতে হবে। যখন প্রশ্ন উঠেছে তখন নিশ্চয়ই এটা খতিয়ে দেখা হবে।’ তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আছে। সেই সঙ্গে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র ফিরে এসেছে।