টানা দুই দিন বন্ধ থাকার পর মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথে এখনো কাটেনি নাব্যতা সংকট। আজ রোববার সকাল থেকে ১৯টি ফেরির বিপরীতে স্বল্প যানবাহন নিয়ে চলছে মাত্র চারটি ফেরি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘাটের সমস্যার সমাধান হয়নি। শুক্র ও শনিবার ফেরি বন্ধ থাকার পরে আজ সকাল সাতটা থেকে একটি কে-টাইপ ও ৩টি ছোট (ভিআইপি) ফেরি স্বল্প যানবাহন নিয়ে চলাচল করছে। তবে রাতে বেশির ভাগ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। আজও রাখা হতে পারে।
সালাম হোসেন আরও বলেন, ‘চ্যানেলের মুখে নাব্য সংকট সমাধান কবে হবে, তা বলা যাচ্ছে না। ফেরিগুলোকে সচল রাখতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে। আপাতত এই নৌপথে যে কয়টা ফেরি চলছে, তা দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী যানবাহন পারাপার করা সম্ভব না। আমরা ঘাটে আসা যানবাহনগুলোকে বিকল্প নৌপথ ব্যবহার করতে বলে দিয়েছি।;
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র বলছে, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নৌপথের বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর সৃষ্টি হলে ফেরি চলাচল প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়। নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ও চায়না চ্যানেল মুখে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রচুর পরিমাণে পলি এসে জমা হয়। ফলে অচল হয়ে পড়ে ফেরি চলাচল। এরপরে বিআইডবিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ আটটি খননযন্ত্র বসিয়ে শুরু করে খননকাজ। আজ সকালে চ্যানেল মুখ থেকে কিছুটা পলি অপসারণ করা হলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়।
জানতে চাইলে বিআইডবিটিএর ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাশরেকুল আরেফিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা নদীর বিরূপ চরিত্র। ২১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় এক ফুট করে পানি কমেছে। তবে পানি বর্তমানে স্থিতিশীল আছে। পানি কমার ফলে নদীর বিভিন্ন স্থানে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়। আমরা ড্রেজিং করে ওই ডুবোচরগুলো কেটে দিয়েছে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী মাশরেকুল আরও বলেন, ‘বর্তমানে লৌহজং পয়েন্টে নাব্যতা সংকট নেই। এখন দিয়ে ফেরি চলতে কোনো বেগ পেতে হয় না। তবে চায়না চ্যানেলে জায়গা অনেক বড়। এখানে আমরা ড্রেজিংয়ের কাজ করছি। আশা করছি, আগামীকালের (সোমবার) মধ্যে পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।’
আজ সকাল ১০টার দিকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটের ২, ৩ ও ৪ নম্বর ঘাটে কয়েকটি ডাম্ব ও দুটি রো রো ফেরি নোঙর করে রাখা। ১ নম্বর ঘাটে একটি ছোট ফেরিতে স্বল্প কিছু ছোট যানবাহন ও মোটরসাইকেল তোলা হচ্ছে। ঘাটের চারটি সংযোগ সড়কেই যানবাহনে চাপ রয়েছে। এ ছাড়া ঘাটের ট্রাক টার্মিনালে আটকা পড়েছে পণ্যবাহী কয়েক শ ট্রাক।
শিমুলিয়া থেকে মাদারীপুরগামী যাত্রী শাহাদাত আকন বলেন, ‘শিমুলিয়া ঘাটে ১১টায় আসি। এরপরে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো ফেরির দেখা পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে লঞ্চ করে পদ্মা পাড়ি দিয়েছি। লঞ্চেও ভিড়। ফেরি চলাচল ব্যাহত থাকায় আমাদের এভাবে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।’
দুপুর ১২টার দিকে কাঁঠালবাড়ি ফেরি ঘাটের ১ নম্বর ঘাটে লাইনে দাঁড়ানো মাইক্রোবাসের চালক মোচ্ছাদেক ব্যাপারী বলেন, ‘খুলনা থেকে সকাল নয়টায় ঘাটে এসেছি। এখন ১২টা বাজে। এই পর্যন্ত ঘাটে একটি ছোট ফেরি এসেছে। যেখানে ভিআইপি ও সরকারি কয়েকটি গাড়ি তুলেছে মাত্র। ওই ফেরিতে আমাদের তোলা হয়নি।’
চট্টগ্রামগামী ট্রাকের চালক সোহেল কাজী বলেন, ‘ঘাটে এসেছি সাত দিন হলো। দুই দিন হলো সিরিয়ালে বসে আছি। কখন ফেরিতে উঠতে পারব, তা কেউ ঠিক করে বলছে না। ঘাটের লোকেরা বিকল্প পথে যেতে বলে। কিন্তু বিকল্প পথে গেলেও আমাদের দুর্ভোগ।’
কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট কুশল কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাটে তিন-চার ঘণ্টা পরে একটি ফেরি আসে। চাহিদা অনুযায়ী ফেরিগুলো যানবাহন তুলতে পারছে না। পণ্যবাহী ট্রাক ও ভারী যানবাহনগুলো টার্মিনালে ও সংযোগ সড়কে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে।’
কুশল সাহা বলেন, ‘যেসব যানবাহন আসছে, সেগুলোকে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। বর্তমানে টার্মিনালে আড়াই শতাধিক ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় আছে।’