দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এই জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন সময় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তবে বাস্তবে এসবের সুফল পাচ্ছে না এই জনগোষ্ঠী।
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মানবাধিকার প্রতিবেদন দলিত জনগোষ্ঠী ২০১৩-১৪’ নামের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ কথা বলা হয়। বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ ও এনজিও ফেয়ার যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এতে সহায়তা করে।
ফেয়ারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে হত্যা, ধর্ষণ ও হামলার শিকারের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় এই জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫০০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী সহিংসতায় ৫০ জনের বেশি আহত হন।
অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন ফেয়ারের পরিচালক দেওয়ান আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, দলিত জনগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হলেও গণমাধ্যমে সেসব ঘটনা খুব কমই প্রকাশ পায়।
অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে জানা গেল, তিনি আসবেন না। ফলে অন্য অতিথিরা প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতি ও হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ লাল বলেন, ‘ভিআইপি ব্যক্তিরা কথা দিয়েও আসতে পারেন না। এক মাস আগে থেকে সময় নেওয়া ছিল। এর আগেও অনুষ্ঠানের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে আপনারাই বলেন, আমরা বৈষম্যের শিকার কি না।’
কৃষ্ণ লাল বলেন, ‘নিজের ছেলেকে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়ানোর পরও সুইপারের কাজ করতে পাঠাতে হয়েছে। ছেলে, ভাগনাদের বলতে হচ্ছে ঝাড়ু, বালতি হাতে নিয়ে সুইপারের কাজ ছাড়া তাদের জন্য আর কোনো কাজ নেই। রেলওয়েতে চাকরির জন্যও চার লাখ টাকা ঘুষ চায়।’
মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন বলেন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নসহ দলিত জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। আইন থাকলে বিভিন্ন বৈষম্যের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করা সহজ হয়।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক রিনা রায়, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের মহাসচিব নির্মল চন্দ্র দাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।