জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু সংস্কার করে ট্রেনের গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। গতকাল সকাল নয়টায় কালুরঘাট এলাকায় সেতুর নগর প্রান্তে
জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু সংস্কার করে ট্রেনের গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। গতকাল সকাল নয়টায় কালুরঘাট এলাকায় সেতুর নগর প্রান্তে

কালুরঘাট সেতু

‘দর–কষাকষিতে’ ঝুলে আছে সংস্কার

পুরোনো সেতু সংস্কারের সমীক্ষা ফি হিসেবে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চেয়েছে বুয়েট। এদিকে নতুন সেতু নির্মাণের জটিলতা কেটেছে।

চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বন্দর নগর চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে স্বল্প সময়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৯১ বছরের পুরোনো কালুরঘাট সেতু। জরাজীর্ণ সেতু সংস্কার করে ট্রেনের গতি বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা নিচ্ছে রেলওয়ে। তবে বুয়েটের দেওয়া সমীক্ষা ফি নিয়ে চলছে ‘দর-কষাকষি’। বুয়েট সমীক্ষা ফি হিসেবে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দর দিয়েছে। এদিকে কালুরঘাটে নতুন সেতুর নির্মাণপ্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা কেটেছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যমান কালুরঘাট সেতু সংস্কারের বিষয়ে বুয়েট একটি দর দিয়েছিল। সেটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কিছুদিন পর আবার বসবে তারা। তখন চূড়ান্ত হবে।

গত বছরের ৯ অক্টোবর কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন করে যান বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পর্যবেক্ষক দলের প্রধান এ এফ এম সাইফুল আমিন, অধ্যাপক খান মাহমুদ আমানত ও আবদুল জব্বার খান। তাঁরা সেতু পরিদর্শন করে রেলওয়েকে একটি প্রতিবেদন জমা দেন। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেতুটির সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে বুয়েটের কাছ থেকে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব নিয়েছে রেলওয়ে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করে ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। যদি পরে দোহাজারী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয় এই রেললাইন।

৬৩৮ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় সেতুটি সংস্কার করেছিল রেলওয়ে। কিন্তু এরপরও সেতুটির অবস্থা জরাজীর্ণ। এ অবস্থায় সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী গাড়িও চলাচল করে। ট্রেন চলাচল করলে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। একমুখী যান চলাচলের কারণে সব সময় যানজট লেগে থাকে। যাত্রী ও চালকদের প্রচণ্ড ভোগান্তি পোহাতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাটে নতুন সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যমান সেতুটিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন রেললাইন চালুর আগেই এই সংস্কারকাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।

রেলওয়ের প্রকৌশলীরা জানান, বর্তমানে কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে ১০ টন ভারী ট্রেনের ইঞ্জিন চলাচল করে। এ সময় গতি থাকে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। কিন্তু কক্সবাজারগামী ট্রেনের ইঞ্জিনের ভর হবে ১২ থেকে ১৫ টন। ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। কালুরঘাট সেতুর বর্তমান অবস্থার কারণে এই গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না। অন্তত ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা আছে। এ জন্য বুয়েটের পরামর্শক দলের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সেতু সংস্কার করা হবে।

কেটেছে উচ্চতা জটিলতা

কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের বিষয়ে গত ২৯ মার্চ রেল ভবনে মন্ত্রণালয় ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ।

যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জটিলতা একধরনের নিরসন হয়েছে। এখন পদ্মা সেতুর আদলে এখানেও দ্বিতল সেতু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এক-দুই মাসের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত করা হবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল ও সড়ক সেতুর জন্য নকশা প্রণয়ন করা হয়েছিল। তখন নদী থেকে সেতুটির উচ্চতা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ মিটার। ২০১৮ সালের প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১৫১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। তবে ৭ দশমিক ৬ মিটার উচ্চতায় সেতু করার ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটি ১২ দশমিক ২ মিটার উঁচুতে সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানায়। এখন এই উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে সেতুর নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিয়া জানান, উচ্চতা নিয়ে আগে জটিলতা থাকলেও এখন তার সমাধান হয়েছে।