মাদক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মানিক মিয়ার বদলে গ্রেপ্তার হওয়া মানিক হাওলাদার একই ব্যক্তি নন। তাঁরা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি।
মানিক মিয়ার বদলে মানিক হাওলাদারের কারাভোগের অভিযোগ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিচারিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিল সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়।
প্রকৃত নাম ও ঠিকানা যাচাই না করে নামের মিলে মানিক হাওলাদারকে কারাগারে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তাঁর স্ত্রী সালমা বেগম গত ২ মার্চ রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৮ মার্চ হাইকোর্ট রুলসহ বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন।
প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করতে শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩০ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সিরাজগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ ও জেল সুপারকে এই অনুসন্ধানকাজে সহযোগিতা করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় বিচারিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়ে।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী পার্থ সারথী রায়। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আইনজীবী পার্থ সারথি রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ আদেশের জন্য রিটটি কার্যতালিকায় রয়েছে।’
মাদকের এক মামলায় মানিক মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চার বছরের কারাদণ্ড দেন সিরাজগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১। তার আগে মানিক মিয়া জামিন নিয়ে পলাতক হন।
মামলার সূত্রে নামের আংশিক মিল থাকায় গত বছরের ২৮ নভেম্বর মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন। এ অবস্থায় মানিক হাওলাদারের স্ত্রী রিট করেন।
নাম-পরিচয়ের সত্যতা যাচাই ছাড়া এই মামলায় মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, সিরাজগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক, সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলারসহ বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
নথিপত্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানিক হাওলাদারের বাবার নাম নজরুল ইসলাম। আর মানিক মিয়ার বাবার নাম ইব্রাহীম মৃধা। তবে মামলার নথিপত্রে মানিক মিয়ার বাবার নাম উল্লেখ আছে নজরুল হাওলাদার।
মামলার এজাহার ও থানা সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২ জুন র্যাব অভিযান চালিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে ফেনসিডিলসহ চার ব্যক্তিকে আটক করে। র্যাবের পক্ষ থেকে ওই দিন সলঙ্গা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে চার ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করা হয়। আসামিদের একজন শরীয়তপুরের ব্যাপারীকান্দি গ্রামের মানিক মিয়া। গ্রেপ্তারের কিছুদিন পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর থেকে তিনি পলাতক। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই মামলার রায়ে চার আসামিকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
শরীয়তপুরের সখীপুর থানাসূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এ একটি মাদক মামলার চার বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. মানিক মিয়া, পিতা নজরুল হাওলাদার, গ্রাম ব্যাপারীকান্দির নামে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর সখীপুর থানায় আসে। সখীপুর থানার পুলিশ গত বছরের ২৮ নভেম্বর এই থানার ব্যাপারীকান্দি গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে।
মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর পরিবার গত ৩০ নভেম্বর শরীয়তপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করে। সে সময় তিনি প্রকৃত আসামি নন—এ কথা উল্লেখ করে এর সপক্ষে কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়। তখন আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শামসুর রহমানকে লিখিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করার নির্দেশ দেন। গত ৯ ডিসেম্বর এএসআই শামসুর রহমান আদালতে উপস্থিত হয়ে দাবি করেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আসামি হিসেবে লেখা নামের সঙ্গে মিলে যাওয়া এবং এই নামে অন্য কোনো ব্যক্তি না থাকায় তিনি মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেন।