গোলটেবিল বৈঠক

দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আরও বিনিয়োগ দরকার

প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর। পাশে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিয়াইনেন। প্রথম আলো
প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর। পাশে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিয়াইনেন। প্রথম আলো
>এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব বাড়ানোর আহ্বান।

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। শ্রমিকদের পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। গতকাল শনিবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনে সহযোগিতা দেয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।

২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে হবে বাংলাদেশকে। এসডিজিতে দারিদ্য নির্মূল, ক্ষুধা দূর করা, মানসম্পন্ন শিক্ষাসহ ১৭টি লক্ষ্য আছে। এ ছাড়া লক্ষ্য (নির্দিষ্ট বিষয়ে অর্জন) রয়েছে ১৬৯টি। এর মধ্যে সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরির কথা বলা আছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বলেন, কারিগরি শিক্ষার শিক্ষাক্রম প্রস্তুতের ক্ষেত্রে কারখানা মালিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয় না। তাই কারখানা মালিকদের কেমন এবং কোন বিষয়ে প্রশিক্ষিত শ্রমিক দরকার, তা অজানা থেকে যায়। ফলে অনেক শ্রমিক প্রশিক্ষণ শেষে কারখানায় গিয়ে তা কাজে লাগাতে পারেন না।

মো. আলমগীর বলেন, প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর তা কী কাজে লাগছে, সেটি মূল্যায়ন করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি থাকার পরও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তা অব্যবহৃত থেকে যায়। এসব কেন্দ্রের প্রশিক্ষকেরা দেশ-বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেও তা কাজে লাগাতে চান না। প্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে।

কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খাতে বিনিয়োগ জরুরি বলে মনে করেন আইএলওর এদেশীয় প্রধান (কান্ট্রি ডিরেক্টর) টুমো পোটিয়াইনেন। তিনি বলেন, বিনিয়োগ ছাড়া কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এসডিজির নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। শুধু গার্মেন্টস বা রপ্তানিসংশ্লিষ্ট কারখানার শ্রমিক নন, অন্যান্য খাতের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষিত শ্রমিক গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাস বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোকে যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে। তাদের সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। তিনি মনে করেন, সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে শুধু সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, ব্যবহারিক শিক্ষা ও কাজের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

সমাজে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধির ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, সমাজের এই ধারণা বদলাতে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। কারিগরি প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে একটি সার্বিক নীতিমালা প্রয়োজন।

আইএলওর ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর (জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী) অ্যালেক্স সিউস চিছাম বলেন, যে হারে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, সে তুলনায় প্রশিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করলে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।