প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ডের উদ্দেশে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা ছেড়েছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশেষ একটি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাপানের রাজধানী টোকিওর উদ্দেশে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনী প্রধান, ডিপ্লোমেটিক কোরের ডিন এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটির টোকিওর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় হেনেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। বিমানবন্দরে জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তোশিকো আবে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরের প্রথমে জাপানে ২৮ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় ফিউচার এশিয়া শীর্ষক ২৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন ভাষণ দেবেন। শেখ হাসিনা সেখানে একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। সেখানে তাঁর সম্মানে বাংলাদেশি কমিউনিটির দেওয়া একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। এ ছাড়া তিনি হোলি আর্টিজানে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি জাপানের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
জাপানে সফর শেষ করে শেখ হাসিনা জেদ্দার উদ্দেশে টোকিও ছাড়বেন। তিনি আগামী ৩ জুন পর্যন্ত সেখানে থাকবেন।
সৌদি আরব সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ১৪তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখানে মক্কাতে ৩১ মে ‘মক্কা সামিট: টুগেদার ফর দ্য ফিউচার’ শীর্ষক ইসলামি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী সেখানে পবিত্র ওমরাহ পালন করবেন।
সৌদি আরব সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩ জুন ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির উদ্দেশে জেদ্দা ত্যাগ করবেন। প্রধানমন্ত্রী ৪ জুন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
জাপান সফরের প্রথম দিনে আজ প্রধানমন্ত্রী জাপানি সময় ৮টা ৩০ মিনিটে হোটেল ওকুরাতে কমিউনিটি অভ্যর্থনায় যোগ দেবেন। কাল সকালে হোটেল নিউ অটনিতে প্রধানমন্ত্রী জাপানি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে প্রাতরাশ গোলটেবিল সভা করবেন। কালই আবার গুলশানের হোলি আর্টিজানে ক্ষতিগ্রস্ত জাপানিরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর বিকেলে তিনি জাপানি প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সভায় মিলিত হবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পৌঁছালে সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। আলোচনা শেষে দুই দেশের মধ্যে চুক্তিসই এবং যৌথ ঘোষণা পড়া হবে।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজসভায় অংশগ্রহণ করবেন।
আগামী বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ইমপেরিয়াল হোটেলে নিক্কেই সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেখানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন। শেখ হাসিনা পরে একই জায়গায় ভবিষ্যৎ এশিয়াবিষয়ক ২৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং ভাষণ দেবেন। পরে জাইকার সভাপতি শিনিচি কিতাওকা প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানস্থলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নিক্কেই কনফারেন্স নৈশভোজে অংশ নেবেন। সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন প্রধান বক্তা।
শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে (জাপান সময়) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মক্কায় ওআইসির ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের ১৪তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য জেদ্দার উদ্দেশে হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তোশিকো আবে বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানাবেন।
শেখ হাসিনা শুক্রবার স্থানীয় সময় ৫টা ২৫ মিনিটে বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন এবং সন্ধ্যায় তিনি মক্কার সাফা প্রাসাদে ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন।
৩১ মে মক্কায় ওআইসির ইসলামিক সম্মেলনের ১৪তম অধিবেশনের আয়োজন করেছে সৌদি আরব। ১ জুন দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের প্রথম কর্ম অধিবেশনে অংশ নেবেন এবং দেড়টায় অংশ নেবেন দ্বিতীয় কর্ম অধিবেশনে।
প্রধানমন্ত্রী বেলা আড়াইটায় সমাপনী অধিবেশনে এবং পরে সাফা প্রাসাদে সুহুর ভোজে অংশ নেবেন। সন্ধ্যায় তিনি ওমরাহ পালন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী আগামী ২ জুন সকালে বিমানযোগে মদিনার উদ্দেশে জেদ্দা ত্যাগ করবেন এবং হজরত মুহাম্মদের (সা.) রওজা মোবারকে ফাতেহা পাঠ করবেন।
সন্ধ্যায় তিনি বিমানযোগে জেদ্দার উদ্দেশে মদিনা ত্যাগ করবেন। ৩ জুন দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটে তিনি ফিনল্যান্ডের হেলসিংকির উদ্দেশে জেদ্দা ত্যাগ করবেন। ৪ জুন তিনি ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ৭ জুন ফিনল্যান্ডের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে ফিনল্যান্ডের বিমান ফিনএয়ারযোগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে হেলসিংকি বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন।
একই দিনে তিনি দেশে ফিরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।