ভারতের উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এতে লালমনিরহাট, রংপুর ও নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রংপুর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। আজ সকাল ছয়টায় সেখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ৫২ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ, ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা নদীতীরবর্তী জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেকেই নিরাপদ স্থান, শুকনো স্থান কিংবা বাঁধে ছুটে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের ভাষ্য, তিস্তার পানি গতকাল শনিবার রাত ১১টার পর থেকে বাড়তে শুরু করে।
চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকার যেসব স্থান শুকনো ছিল, সেসব স্থানে এখন পানি উঠেছে। চরাঞ্চলের মানুষের আশঙ্কা, যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে করে আজ–কালকের মধ্যে নদীতীরবর্তী এলাকায় পানি বেড়ে যেতে পারে।
পাউবো রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, রংপুরের উজানে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানি বাড়লে সেই পানি ভাটি অঞ্চলে নেমে আসতে কিছুটা সময় নেবে। এ কারণে কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা পয়েন্টে পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। কিন্তু এ অবস্থা থাকবে না। পানি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে আর দুই দিন নদীর পানি বাড়া–কমার মধ্যেই থাকবে।
তিস্তা নদীর পানি বাড়ায় নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। গতকাল শনিবার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আজ রোববার সকালে আবারও অবনতি হয়। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম ও চরের পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েন।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, ‘ভারতের উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসছে। পানিবন্দী মানুষকে এবার অনেক আগে থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁরা প্রস্তুতি নিতে পেরেছেন। এরপরও আমার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের পাঁচটি গ্রামে এক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কোথাও এক হাঁটু, কোথাও কোমরপানি। নদীর উত্তাল ঢেউয়ে সেখানে যোগাযোগ করারও তেমন উপায় থাকে না।’
এদিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, উত্তর চিলাখাল, সাউথপাড়া, মটুকপুরসহ চার গ্রামের এক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে শুকনো স্থানে ছুটে গেছে বলে ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়। এ ছাড়া গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, মহিষাসুর, রমাকান্ত, আলালচর, জয়দেব এলাকা এবং নোহালী ও আলমবিদিতর এই দুই ইউনিয়নসহ তিন ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন।
পাউবো রংপুর কার্যালয় সূত্র বলছে, রাতে পানি বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানি বাড়ার কারণে তিস্তা ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই দিন পানি আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে লালমনিরহাটের নদ-নদীর পানি বেড়েছে। লালমনিরহাটের প্রধান দুই নদী তিস্তা ও ধরলার পানি আজ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, আজ সকাল ছয়টায় ফুলবাড়ির শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং একই দিন একই পয়েন্টে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ধরলা নদীর পানির বিপৎসীমা ৩১ দশমিক শূন্য ৯ মিটার।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, তিস্তা ও ধরলাপাড়ের নিম্নাঞ্চলের ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী। ত্রাণ সহায়তা তহবিল থেকে ১৫০ মেট্রিকটন জিআর চাল ও ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি কমে আসায় পানিবন্দী সমস্যার উন্নতি হচ্ছে, কোনো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়নি, তবে প্রস্তুতি রয়েছে।