ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

তিন মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় হতাশ সম্পাদক পরিষদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপনে সরকারের তিনজন মন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণ না হওয়ায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছে সম্পাদক পরিষদ। পরিষদ শিগগিরই শুরু হতে যাওয়া বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে আইনটি সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। এসব বিষয়ে পরিষদ কাল শনিবার দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অবস্থান জানাবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সম্পাদক পরিষদ এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে। এর আগে এ নিয়ে গতকালই রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে দৈনিক ইত্তেফাক–এর সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের সভাপতিত্বে পরিষদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সম্পাদক পরিষদ সাইবার জগৎ ও ডিজিটাল নিরাপত্তায় আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা সমর্থন করে। তবে সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির সই করা ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩-এর মতো বিতর্কিত ধারাগুলো মুক্ত সংবাদমাধ্যমের পরিপন্থী, বাক্‌স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী এবং গণতন্ত্রের সঙ্গে বিরোধাত্মক বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগের কথা মন্ত্রিসভায় উত্থাপন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি সংশোধিত খসড়া প্রণয়নের বিষয়ে তিনজন মন্ত্রীর দেওয়া সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি রক্ষা না হওয়ায় সম্পাদক পরিষদ গভীর হতাশা প্রকাশ করছে। সম্পাদক পরিষদ বিষয়টিকে আস্থা ও বিশ্বাসের লঙ্ঘন বলে মনে করে।

সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর উদ্যোগে, যিনি প্রস্তাবিত আইন নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর প্রতিশ্রুতি দেন এবং সম্পাদক পরিষদকে আলোচনায় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানান। একই প্রতিশ্রুতি ওই সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছিল। সম্পাদক পরিষদ মনে করে, প্রতিশ্রুত আলোচনা শুরুর একটি সুযোগ ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দেওয়ার মাধ্যমে হারিয়ে গেছে। সাংবিধানিক এখতিয়ারবলে রাষ্ট্রপতি বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠালে ওই আলোচনা হতে পারত।

সম্পাদক পরিষদ শিগগিরই শুরু হতে যাওয়া বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে বলেছে, আইনটিকে বাক্‌স্বাধীনতার প্রতি গুরুতর হুমকি বিবেচনা করে সাংবাদিক ও নাগরিক সম্প্রদায় যে উদ্বেগ জানিয়েছে, তা নিরসনের এটাই শেষ সুযোগ।

সম্পাদক পরিষদ পুলিশি হস্তক্ষেপ ও খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তারের কবল থেকে বাক্স্বাধীনতা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের সুরক্ষায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করতে সংবাদ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সংবিধানের ৩৯(ক) ও (খ) ধারায় প্রদত্ত বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জড়িয়ে থাকা মূল্যবোধ, স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার, জাতিসংঘ সনদ, অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তিতে সুরক্ষিত গণতন্ত্র, মুক্ত সমাজব্যবস্থা, মৌলিক অধিকারের নীতি এবং নৈতিক ও স্বাধীন সাংবাদিকতার মূল মূল্যবোধগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে সম্পাদক পরিষদ মনে করে।

বিবৃতিদাতা সম্পাদকেরা হলেন ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, নিউজ টুডের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, মানবজমিন–এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন, আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, করতোয়া সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক এম শামসুর রহমান, সংবাদ–এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনিরুজ্জামান, যুগান্তর–এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকাল–এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস–এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম। বিজ্ঞপ্তি