তিন্নির চাচাকে বলেছিলেন অভি ‘তিন্নিকে বাইর কইরা দে, নয় মাইরা ফালামু’

মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি
ফাইল ছবি

২০ বছর আগে রাজধানীতে খুন হওয়া বিজ্ঞাপনের মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর বাবা সৈয়দ মাহাবুব করিম ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিমকে দুই দফা গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভি। এমনকি অভি তাঁদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘তোরা তিন্নিকে কোথায় লুকিয়ে রাখছস। তাড়াতাড়ি তিন্নিকে বাইর কইরা দে, নয় মাইরা ফালামু।’

মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় তাঁর চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম আজ বুধবার আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এসব কথা বলেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁর সাক্ষ্য প্রদান শেষ হয়েছে। এর আগে তিন্নির বাবাও সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আলোচিত এ হত্যা মামলায় রায় ঘোষণার জন্য গত বছরের ১৫ নভেম্বর দিন ঠিক ছিল। তবে সেদিন মামলার গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষী তিন্নির বাবা ও চাচা সাক্ষ্য দিতে চাইলে আদালত রায় মুলতবি করে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেন। এ বছরের ৫ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।

আগামী ১৭ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন ঢাকার সপ্তম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কেশব রায় চৌধুরী।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নিচে তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, অভির প্ররোচনায় মডেল তিন্নি তাঁর স্বামীকে তালাক দেন। কিন্তু এরপর অভি তিন্নিকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে তিন্নি এসব তথ্য মিডিয়ায় ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন। ক্ষিপ্ত হয়ে অভি ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যার পর রাতের যেকোনো সময় তিন্নিকে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য গাড়িতে করে কেরানীগঞ্জ থানার ১ নম্বর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কাছে ফেলে রাখেন।

তিন্নির চাচা যা বললেন
তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, একদিন অভি পিয়ালকে (তিন্নির স্বামী) ডেকে বলেন, ‘তুমি তিন্নিকে ছেড়ে দাও। আমি তিন্নিকে বিয়ে করব।’ সেদিন অভি পিয়ালকে বাসা থেকে বের করে দেন। এর পর থেকে অভি আর তিন্নি একই বাসায় থাকতে শুরু করেন।

তিন্নির সঙ্গে শেষ দেখার স্মৃতি আদালতকে জানান রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত ১০ থেকে ১৫ রোজার মধ্যে তিন্নি আমাদের কলাবাগানের বাসায় এসেছিল। ১০ থেকে ১৫ মিনিট বাসায় অবস্থান করে। তাকে সেদিন খুব অস্থির দেখায়। তিন্নি যাওয়ার আগে বলে, সে অভির সঙ্গে পার্টিতে যাবে। পরে তিন্নি বাসা থেকে চলে যায়। তিন্নি বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর তাদের বাসার গৃহকর্মী বীনা বাসায় আসে। তিন্নি কোথায়, তা জানতে চায়। অভি তিন্নিকে খুঁজতেছে বলে জানায় বীনা।’ এরপর তাঁরাও তিন্নির খোঁজ করতে শুরু করেন। কয়েক দিন পর পত্রিকায় তিন্নির মরদেহের ছবি ছাপা হয়। তিনি তা দেখেন।

তিন্নি নিখোঁজ হওয়ার পর অভির সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, সেটি আদালতকে জানান সৈয়দ রেজাউল করিম। তিনি আদালতকে বলেন, ‘তিন্নি নিখোঁজ হওয়ার পরদিন অভি তাদের বাসায় আসে। অভি বলে, “তোরা তিন্নিকে কোথায় লুকিয়ে রাখছস।” পিস্তল ধরে বলে, “তাড়াতাড়ি তিন্নিকে বের করে দে। নয় মাইরা ফালামু।” তখন আমার বাবা ভয় পেয়ে যান। কারণ, তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ছিলেন।’

সৈয়দ রেজাউল করিম জানান, তিন্নির মরদেহ শনাক্ত করার আগপর্যন্ত অভি তিন্নির বাবার বাসায় আসতেন। তিন্নিকে খুঁজে বের করে দেওয়ার জন্য চাপ দিতেন। একদিন দেখেন, অভি তাঁদের বাসায় চুপ করে বসে আছেন। তখন তাঁকে দেখার পর বলেন, ‘তোরে একটা গুলি কইরা দিমু।’ তিনি তখন বলেন, ‘করলে কর।’ পরে অভির সঙ্গে বাসার গেট পর্যন্ত আসেন সৈয়দ রেজাউল করিম। তিনি আদালতে বলেন, গেটে আসার পর অভি বলেন, ‘তোর পকেটে কত টাকা আছে।’ তখন রেজাউল বলেন, ‘তোর দরকার কী?’ তখন অভি আবার তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলেন, ‘দিমু বিন্দাইয়া।’

অভি এরপর রেজাউলের পকেটে থাকা ৭৫ টাকা নিয়ে নেন। পরে নিজের পকেট থেকে ৫০০ টাকা বের করে রেজাউলকে দেন। রেজাউল না নিতে চাইলে অভি তখন বলেন, ‘একটা ওষ্ঠা মাইরা বুড়িগঙ্গায় ফেলাইয়া দিমু।’ তারপর অভি বলেন, ‘তিন্নিকে খুঁজতে হবে না।’ এ কথা বলার পর সৈয়দ রেজাউল করিম অভির শার্টের কলার চেপে ধরেন। তখন অভি তাঁকে বাড়ি দিয়ে চলে যান। এরপর অভির সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি। পরে জানতে পারেন, অভি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।