তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সিবিএ সভাপতি, দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর আটকা পড়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে। অবৈধ গ্যাস-সংযোগ, মিটার টেম্পারিংসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছ সংস্থাটি।
এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, যাচাই-বাছাই শেষে তথ্য সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অনুসন্ধানের বিষয়ে এক ধাপ এগিয়ে অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।
দুদকের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ১১, ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর পাঠানো তলবি নোটিশে তাঁদের যথাসময়ে দুদকে হাজির করার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এঁদের মধ্যে সিবিএ সভাপতি হাজী কাজীম উদ্দিনকে ১১ সেপ্টেম্বর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আয়াজ উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ নাসীর উদ্দিনকে ১২ সেপ্টেম্বর এবং সিবিএ নেতা হিসাবরক্ষক আসাফুদ্দৌল্লাহ টুটুল ও সাভার মিটারিং অ্যান্ড ভিজিলেন্স শাখার ডেপুটি ম্যানেজার মো. সিরাজুল ইসলামকে ১৩ সেপ্টেম্বর দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে জানানো হয়, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সিবিএ সভাপতি হাজী কাজীম উদ্দিন, অন্য নেতা ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ দেওয়া, বাইপাস লাইন দেওয়া, মিটার টেম্পারিংসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্র জানায়, তিতাসের এসব নেতা ও কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিষ্ঠানটিতে অবৈধ অর্থ-বাণিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। অবৈধ গ্যাস-সংযোগ, মিটার টেম্পারিং, বাইপাস লাইন থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে তাঁরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ কারণে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। অভিযোগে বলা হয়, তিতাসের সিবিএ সভাপতি হাজী কাজীম উদ্দিন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতা করে আসছেন। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সহকারী কর্মকর্তা হোসেন ও তাঁর সহযোগীদের মাধ্যমে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ, বাইপাস লাইন, মিটার টেম্পারিংসহ নানা ধরনের অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কাজী কাজীম উদ্দিন চলমান সিন্ডিকেটের অবৈধ আয়ের সিংহভাগই ভোগ করছেন। বর্তমানে তিনি অবসরকালীন ছুটিতে থাকা সত্ত্বেও সিবিএ সভাপতির পদ আঁকড়ে রেখেছেন।
তিতাস গ্যাসের আরেক সিবিএর নেতা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আয়াজ উদ্দিনও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে অবৈধ সুবিধা ভোগ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিতাসের বিভিন্ন অঞ্চলের অবৈধ গ্যাস-সংযোগ, লোড বৃদ্ধি, মিটার টেম্পারিং, বাইপাস লাইন নির্মাণের মাধ্যমে অবৈধ অর্থের ভাগ আদায় করছেন। অবৈধ আয়ের টাকায় তিনি একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। আয়াজ উদ্দিনের ভাই তিতাসের সহকারী ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোহাম্মদ নাসীর উদ্দিনের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিয়মিত অফিস না করে তিনি দুই থেকে তিন দিন এসে পুরো মাসের স্বাক্ষর করেন।
সিবিএর আরেক নেতা তিতাসের হিসাবরক্ষক আসাফুদ্দৌলা ওরফে টুটুল ডিসকানেকশন টিমের সদস্য। কিন্তু তিনি তাঁর নির্ধারিত কাজে টিমে কখনোই থাকেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তারপরও সিবিএ নেতা হিসেবে ডিসকানেকশন টিমের কাছ থেকে প্রতিদিনই অবৈধ আয়ের মোটা অঙ্কের ভাগ নেন বলে অভিযোগ। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, পশ্চিম ধানমন্ডির সব অবৈধ সংযোগের সঙ্গে তিনি জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি রাজধানীতে কোটি কোটি টাকার ফ্ল্যাট ও গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিতাসের সাভার মিটারিং অ্যান্ড ভিজিলেন্স শাখার ডেপুটি ম্যানেজার মো. সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাভারের একই স্টেশনে প্রায় ১২ বছর থেকে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসার অভিযোগ রয়েছে।