রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদকে হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের ভার্চ্যুয়াল আপিল বিভাগে আজ মঙ্গলবার এই শুনানি শুরু হয়। আজকের শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) উপস্থাপন করেছেন।
আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করছেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ভার্চ্যুয়ালি শুনানিতে যুক্ত আছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে। শুনানিতে পেপারবুক উপস্থাপন করছে আসামিপক্ষ। কাল বুধবার আবার শুনানি হবে।’
এই মামলায় ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। অপর দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হলেন তাহেরের একসময়ের ছাত্র ও পরে বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর।
আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া অন্য দুই আসামি হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই শিবিরকর্মী আবদুস সালাম ও সালামের আত্মীয় নাজমুল।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা পৃথক আপিল করেন। অন্যদিকে হাইকোর্টে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। পৃথক আপিল শুনানির জন্য আজ মঙ্গলবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে।
তাহের আহমেদের মেয়ে শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তিনি প্রথম আলোকে জানান, চার আসামি কারাগারে আছেন।
২০০৮ সালের ২২ মে বিচারিক আদালত এক রায়ে তাহের হত্যার মামলায় একই বিভাগের এক শিক্ষকসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। আর দুজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে খালাস পাওয়া দুজন হলেন ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জাহাঙ্গীরের বাবা আজিমুদ্দীন মুন্সী।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। এ ছাড়া দণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা ২০০৮ ও ২০০৯ সালে আপিল করেন। আপিলের ওপর ২০১৩ সালের এপ্রিলে রায় দেন হাইকোর্ট।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, অধ্যাপক তাহের বিভাগীয় প্রবীণ শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ সদস্য ছিলেন। তিনি পরিকল্পনা কমিটির সদস্য ও সাক্ষাৎকার বোর্ডের সদস্য ছিলেন। মহিউদ্দিনের চাকরির মেয়াদ ১২ বছর এবং সহকারী অধ্যাপক পদে তাঁর পাঁচ বছর পূর্ণ না হওয়ায় ২০০৫ সালের ৪ আগস্ট পরিকল্পনা কমিটির সভায় অধ্যাপক তাহের তাঁর পদোন্নতির বিষয়ে মতামত দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
মহিউদ্দিন পরিকল্পনা কমিটিকে পাশ কাটিয়ে উপাচার্য বরাবর পদোন্নতির জন্য আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী মহল তাহেরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
মহিউদ্দিনের গবেষণাগুলো ছিল যৌথ। কিন্তু পদোন্নতির জন্য দরকার একক গবেষণা। মহিউদ্দিন ও তাঁর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম যৌথভাবে গবেষণা করলেও মহিউদ্দিন তা একক নামে প্রকাশের চেষ্টা করেন।
অধ্যাপক সুলতান অভিযোগ করলে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে। মহিউদ্দিন এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।