তরুণেরা যেন মনে রাখেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

নুজহাত চৌধুরী
নুজহাত চৌধুরী

তিনি দেশের অন্যতম সেরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। কিন্তু পরিচিত শহীদকন্যা হিসেবে। বুদ্ধিজীবী শহীদ আলীম চৌধুরীর কন্যা নুজহাত চৌধুরী বাবার স্মৃতি ও আদর্শকে কেন্দ্র করেই বড় হয়েছেন, পরিবর্তিত হয়েছেন, মানুষ হয়েছেন। ভালোবাসেন দেশকে, দেশের ইতিহাসকে। স্বপ্ন দেখেন, তরুণেরা একদিন বিশ্বজয় করবেন। প্রত্যাশা করেন, সেদিনও তাঁরা দেশের ইতিহাসকে মনে রাখবেন। শোককে শক্তিতে পরিবর্তন করে বেড়ে উঠবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুজহাত চৌধুরী নিজের পর্যবেক্ষণ ও প্রত্যাশা নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে চিকিৎসাক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো কী কী?

নুজহাত চৌধুরী: চক্ষুবিজ্ঞানটা শল্যচিকিৎসা বা সার্জারির অংশ। সার্জিক্যাল পেশায় নারীরা ছিলেন খুব কম। আর থাকলেও তাঁদের কাছে সার্জারি করতে, বিশেষ করে পুরুষেরা খুব কনফিডেন্ট বোধ করতেন না। কিন্তু এখন এই ৫০ বছরের মাথায় এসে দেখি, আমাদের রোগীরা আমাদের হাতে অনায়াসেই সার্জারি করছেন। চিকিৎসক পুরুষ কি নারী, তা নিয়ে খুব বেশি ভেদাভেদ কেউ করছেন না। চিকিৎসাক্ষেত্রে আমি এই বড় পরিবর্তন খেয়াল করি।

প্রশ্ন

নারী বলে কোনো বাধা এসেছে কি?

নুজহাত চৌধুরী: নারী হিসেবে চিকিৎসা পেশায় আসার ক্ষেত্রে আমি পরিবারের কাছ থেকে অনেক সহায়তা পেয়েছি। সহকর্মীদের কাছে কখনো নারী বলে কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি। সমাজে একটি প্রথাগত চিন্তার বৈকল্য বা ক্ষুদ্রতা আছে, যা আমি অস্বীকার করব না। কিন্তু সেটাকে মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার যে দৃঢ়চেতা মন, সেটি আমি আমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি। আমার মা আমাকে শিখিয়েছেন, নারী যদি তাঁর ভেতর গোপন শক্তিটা ধারণ করেন, তাহলে কোনো বাধাই যথেষ্ট নয় তাঁকে থামাতে।

প্রশ্ন

ক্যারিয়ারের সন্ধিক্ষণ বা টার্নিং পয়েন্ট কী?

নুজহাত চৌধুরী: আমি যদি আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট বলি, তা হবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে আমার বাবাকে হারানো। আমার বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী। এই একটি ঘটনা আমাকে মানুষ হিসেবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। বিশেষ করে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে, আমার যখন জ্ঞান হচ্ছে, আমি যখন সব বুঝতে শিখছি, তখন দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ক্ষমতায়। এই ঘটনা আমার সব শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমাকে বিদ্রোহী হতে, সাহসী হতে এবং প্রতিবাদী হতে সহায়তা করেছে। এই একটি ঘটনা আমার ব্যক্তিগত জীবন ও ক্যারিয়ারে ভিন্ন একটি মানুষ হতে সহায়তা করেছে।

প্রশ্ন

এ সময়ের তরুণদের প্রতি আপনার প্রত্যাশা ও পরামর্শ কী?

নুজহাত চৌধুরী: তরুণেরা স্বভাবতই সাহসী, অহংকারী, তাঁদের তারুণ্যের দ্রোহ আছে। আমি তরুণদের কাছে এটুকুই আশা করি, তাঁরা যখন সামনের দিকে তাকাবেন, তাঁরা আকাশ জয় করবেন, তাঁরা আইটি সেক্টর নিয়ে বিশ্বজয় করবেন; তখনো তাঁরা যেন ইতিহাসকে মনে রাখেন, যেন একাত্তরকে, মুক্তিযুদ্ধকে মনে রাখেন; যেন মনে রাখেন, তাঁদের মতো তরুণেরা আত্মাহুতি দিয়ে তাঁদের এই দেশ উপহার দিয়ে গেছেন।