কেন জরিপ, কীভাবে জরিপ

তরুণদের জানতে বুঝতেই জরিপ

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশের বয়স এখন ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। জনগোষ্ঠীর এই তরুণ অংশটির চিন্তাভাবনা, জীবনযাপন, ভবিষ্যতের লক্ষ্য বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ইত্যাদি নিয়ে এই তরুণদের মনোভাব জানতে প্রথম আলো বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ওআরজি-কোয়েস্টের মাধ্যমে একটি দীর্ঘমেয়াদি জরিপ চালায়।

জরিপে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি ধর্ম, জঙ্গিবাদ, মাদক, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক মূল্যবোধ, নৈতিকতার মতো বিষয় নিয়ে তরুণদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। তরুণেরা কী ভাবেন, অবসরে কী করেন, বিনোদনের জন্য কোন মাধ্যম পছন্দ করেন—এসব বিষয়ও জরিপের বিষয়বস্তু ছিল। বিশ্বায়ন, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তরুণদের বিশ্বাস, জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, সেটিও এই জরিপে তুলে আনা হয়েছে।

এবারের জরিপে সারা দেশের ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১ হাজার ২০০ তরুণের মতামত নেওয়া হয়েছে। জরিপটি প্রতিনিধিত্বশীল করতে দেশের সব বিভাগ, শহর ও গ্রামের তরুণদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া লিঙ্গ, বয়স, পেশা, শিক্ষাগত অবস্থান, বৈবাহিক সম্পর্ক, ইন্টারনেট ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো মতামত সংগ্রহে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। জরিপের মতামত সংগ্রহে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। আর প্রশ্নমালা তৈরিতে করা হয়েছে দলভিত্তিক আলোচনা (ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন)।

পুরো জরিপটি করা হয়েছে দৈবচয়ন ভিত্তিতে। জরিপটি পরিচালনার সময়কাল ছিল গত ১ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত। ১ হাজার ২০০ মানুষের মতামত সারা দেশের তরুণদের মনোভাব কতটা প্রতিফলিত করতে পারে? ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হক এ নিয়ে বলেন, ‘জনমতের আন্দাজ পাওয়ার জন্য এ সংখ্যা সন্তোষজনক। দেশের আদমশুমারি অনুযায়ী মানুষের ভৌগোলিক অবস্থান, লিঙ্গভেদ, জাতি ও বয়সের অনুপাতে আমরা উত্তরদাতা নির্বাচন করেছি। এতে মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল মতামত সঠিকভাবে উঠে এসেছে। বিচ্যুতির হার ধরা হয়েছে কম-বেশি ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। কম-বেশি ৩-এর মধ্যে থাকলেই জনমত জরিপকে সাধারণত যথাযথ বলে ধরে নেওয়া হয়। সে জন্য ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ উত্তরদাতাই যথেষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও বহু জরিপ চলে ১ হাজার ১০০ উত্তরদাতার ওপর, যদিও তাদের জনসংখ্যা ৩৪ কোটি।’

বাংলাদেশে যেহেতু নারী-পুরুষের অনুপাত সমান, জরিপেও এই বিষয়ে ভারসাম্য পুরোপুরি রক্ষা করা হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ছেলে ও মেয়ের সংখ্যা ছিল সমান। আর্থসামাজিক অবস্থান অনুসারে তাঁদের আবার চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।

জরিপে উত্তরদাতাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ তরুণ এখন পড়ালেখা করেন, বাকি দুই-তৃতীয়াংশ পড়ালেখা শেষ করেছেন। মতামত দেওয়া তরুণদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩১ শতাংশ, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৩২ শতাংশ এবং ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ছিলেন ৩৭ শতাংশ।

জরিপে মতামত দেওয়া ৪১ শতাংশ তরুণ নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করেন বা ব্যবহারের সুযোগ পান। যদিও উত্তরদাতা ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারে বড় ধরনের পার্থক্য আছে। মতামত দেওয়া তরুণদের মধ্যে ছেলেদের ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৭২ শতাংশ, মেয়েদের ক্ষেত্রে এ হার ২৮ শতাংশ।

পেশার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ৩৬ শতাংশ ছিলেন শিক্ষার্থী। গৃহিণী ছিলেন ৩০ শতাংশ, বেকার ৬ শতাংশ, বাকি ২৮ শতাংশ চাকরি, ব্যবসা, কৃষিকাজের মতো বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। উত্তরদাতাদের ৫১ শতাংশ বিবাহিত আর ৪৯ শতাংশ অবিবাহিত। শহর ও গ্রামের তরুণদের অনুপাতও একই রকম ছিল।

পুরো জরিপটি নিয়ে ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘এটা প্রথম আলোর একটি ভালো উদ্যোগ। এর আগে আমাদের দেশে তরুণদের নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করার নজির খুব একটা দেখা যায়নি। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় কর্মক্ষম গোষ্ঠী তারাই এবং ভবিষ্যতের দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব দেবে তারাই।